দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোমণ্ডপে বিচারের দাবিতে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ন’জন আন্দোলনকারীকে আটক করেছে কলকাতা পুলিশ। তাঁদের লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিবাদে অনশন স্থল থেকে লালবাজার অভিমুখে মিছিল শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মিছিল আটকাতে আগেভাগেই বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে ব্যারিকেড করে দেয় পুলিশ। লালবাজারের সামনের রাস্তাও বাস দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়। সেখানেই বসে পড়লেন আন্দোলনকারীরা।
বুধবার ‘অভয়া পরিক্রমা’ কর্মসূচি ছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। কর্মসূচি হল— মিনিডোরে করে আরজি কর এবং জয়নগরের নির্যাতিতার ‘প্রতীকী মূর্তি’ নিয়ে পুজোমণ্ডপে ঘুরবেন তাঁরা। সেই কর্মসূচি পালন করতেই ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। ঘটনাচক্রে, ওই পুজো তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিস কুমারের বলেই পরিচিত। অভিযোগ, সেখানে গিয়ে ‘বিচার চাই’ স্লোগান তোলেন তাঁরা। সেই অভিযোগেই তাঁদের আটক করে লালবাজারের পথে রওনা দেয় পুলিশ। খবর পেয়ে লালবাজারের উদ্দেশে ধর্মতলা থেকে রওনা দেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের একটি দল। তাঁদের আটকাতে ঘিরে ফেলা হয় লালবাজার। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে বসানো হয় ব্যারিকেড। আন্দোলনকারীরা যাতে কোনও মতেই লালবাজারের আশপাশে না আসতে পারেন, সে জন্য রাস্তায় খালি বাস দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ব্যারিকেডের সামনেই বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা দিতে থাকেন স্লোগান।
বুধবার আন্দোলনকারীদের ‘অভয়া পরিক্রমা’ বার বার বাধার মুখে পড়েছে। কর্মসূচির উদ্দেশ্যে মিনিডোর আনা হচ্ছিল ধর্মতলার অনশনমঞ্চে। অভিযোগ, চাঁদনি চকের কাছে ওই মিনিডোর আটকে দেয় পুলিশ। সেই ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের মিনিডোর আটকানোর খবর পাওয়া মাত্রই অনশনমঞ্চের সামনে থাকা জুনিয়র ডাক্তারেরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান তাঁরা। পুলিশের দাবি, ‘অনুমতি’ না থাকায় মিনিডোর আটকেছেন তাঁরা। পাল্টা জুনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য, তাঁদের ভাড়া করা মিনিডোর অবৈধ ভাবে আটকে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের বচসা, ধস্তাধস্তির সময় পথচলতি প্রচুর সাধারণ মানুষও জড়ো হন সেখানে। এই ঘটনার জেরে পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায় শ্যামবাজারমুখী সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ। যান চলাচল ব্যাহত হয় উল্টো দিকের রাস্তাতেও। শেষমেশ পুলিশের হাত থেকে মিনিডোর ছাড়িয়ে নেন আন্দোলনকারীরা। মানববন্ধন করে মিনিডোর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মিছিলও করেন আন্দোলনকারীরা। স্লোগান ওঠে সরকারের বিরুদ্ধে।
এখানেই শেষ নয়। পুলিশের হাত থেকে মিনিডোর ছাড়িয়ে মিছিল করে ধর্মতলার অনশন মঞ্চের দিকে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, তখন দেখা যায়, অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে ধর্মতলার চার মাথার মোড়। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস, তেলের ট্যাঙ্কার এবং বেশ কয়েকটি ছোট গাড়ি। চালকেরা গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দেন পুলিশের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, পুলিশ তাঁদের গাড়ির চাবি খুলে নিয়েছে। পুলিশ সেই অভিযোগ মানেনি। ওই যানজটের জেরে অবশ্য জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল আটকায়নি। আন্দোলনকারীরাই গাড়ি সরানোর ব্যবস্থা করে ‘অভয়া পরিক্রমা’র মিনিডোর নিয়ে অনশন মঞ্চে পৌঁছন। তার পর রাতে মণ্ডপ থেকে আবার আটক হন ন’জন।