গরু পাচার মামলায় বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যাকে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। বীরভূমের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় হানাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ওই তালিকায় রয়েছে বোলপুরের ভারত সেবাশ্রয় সঙ্ঘের মুলুক শাখাও।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই অনুব্রত ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ‘নামে ও বেনামে’ বিঘের পর বিঘে জমিজমার হদিস পেয়েছেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই সূত্রেই ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের একটি দেড় বিঘা জমি সিবিআইয়ের নজরে আসে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জমি কোনও এক ‘জাদুবলে’ এমন একটি সংস্থার নামে হস্তান্তরিত হয়েছে, যার অন্যতম ডিরেক্টর হিসাবে নাম রয়েছেন অনুব্রত-কন্যা সুকন্যার। মনে করা হচ্ছে, হস্তান্তরিত হওয়া সেই জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তদন্ত করতেই ভারত সেবাশ্রমে হানা দিয়েছেন গোয়েন্দারা।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীদের হাতে যা যা নথি এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সুচিন্ত্যকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি জনসেবামূলক কাজের জন্য ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মুলুক শাখাকে ওই জমি দান করেছিলেন। সেই জমিই পরে কী ভাবে প্রায় দেড় কোটি টাকায় বিক্রি করা হল, তা তদন্তকারীদের ‘বিস্মিত’ করেছে বলে দাবি ওই সূত্রের। তদন্তকারীদেরই সূত্র জানিয়েছে, ভারত সেবাশ্রমের কাছে জমিটি কেনা হয়েছিল ২০১৮ সালে। তা রেজিস্ট্রি করা হয় ২০২১ সালে। জমির দলিলে ভারত সেবাশ্রমের ওই শাখার সভাপতি স্বামী সঙ্ঘমিত্রানন্দেরও সই রয়েছে বলেই দাবি। অন্য দিকে, যে সংস্থার কাছে জমি বিক্রি করা হয়েছে, এএনএম অ্যাগ্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড নামে সংস্থার পক্ষ থেকে দলিলে সই করেছেন বিদ্যুৎবরণ গায়েন, যিনি আদতে অনুব্রতের বাড়িতে পাচকের কাজ করেন। তাঁকে সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সিবিআই।
কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, দানে পাওয়া একটি ট্রাস্টের জমি কী ভাবে হস্তান্তর হল, তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। শুধু তাই নয়, মুলুক এলাকায় জমির দাম আকাশছোঁয়া হওয়া সত্ত্বেও কেন ‘এত কম’ দামে বিক্রি করা হল এবং এই হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় কোনও ‘প্রভাব খাটানো’ হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। সেই সব বিষয় খতিয়ে দেখতেই ভারত সেবাশ্রমে তদন্তকারীরা গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত সেবাশ্রমে যাওয়ার আগেও বীরভূমের বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। বোলপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। সুকন্যার নামে যে চালকলের হদিস মিলেছে, সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করতেই সাব-রেজিস্ট্রি দফতরে অভিযান চালানো হয়েছে বলে খবর সিবিআই সূত্রে। তদন্তকারীদের আরও দু’টি দল বোলপুরের পোস্ট অফিস এবং ইলেকট্রিক অফিসে হানা দিয়েছে। যদিও কী কারণে ওই দুই জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।