মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্লক অফিস চত্বরে তখন চলছে দু’পক্ষের মধ্যে ইটবৃষ্টি। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করছে মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী। পুলিশের তাড়া খেয়ে এদিক-ওদিক দৌড় শুরু করেছেন দু’পক্ষের লোকজন। ঠিক তখনই এক সংঘর্ষকারীকে দৌড়ে ডোমকল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরে আটক করে পুলিশ। তল্লাশি চালাতেই তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি পিস্তল। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে আসা ওই ব্যক্তির নাম বাসির মোল্লা বলে পুলিশ সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, তিনি সারাংপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি। বামেদের অভিযোগ, তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আটকাতেই আগ্নেয়াস্ত্র সমেত তৃণমূল নেতারা সরকারি অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদিও তৃণমূলের যুক্তি, দল কাউকে বেআইনি কিছু করতে বলেনি। কেউ এমন কাজ করলে আইন আইনের পথে চলবে।
শনিবার, পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকেই বার বার উত্তেজনা ছড়ায় ডোমকলে। বামেদের অভিযোগ, তারা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে বিডিও অফিসের সামনে আটকে দেন তৃণমূলের লোকজন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এর পরেই এই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সকাল ১১টা নাগাদ মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য বাম এবং কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা ব্লক অফিসে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাদের আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষণের মধ্যে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ডোমকল বিডিও অফিস চত্বর। উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী। পুলিশ লাঠি চালালে ছত্রভঙ্গ সংঘর্ষকারীরা এদিক-ওদিক দৌড় দেন। তখনই এক সংঘর্ষকারীকে তাড়া করে ডোমকল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চত্বরে পৌঁছে যায় পুলিশ। তাঁকে তল্লাশি করে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র। পুলিশ তাঁর নামধাম জানতে পারে। এর পর বাসিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে তৃণমূল নেতার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ‘‘ঠিক ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যেমন হয়েছিল, ওই কায়দায় তৃণমূল গুন্ডাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে আবার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করতে চাইছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসন তৃণমূলের পক্ষে কাজ করছে। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এর থেকে ভয়ানক দৃশ্য আর কি হতে পারে?’’ তবে তৃণমূল নেতার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সভাপতি শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘কেউ আইন ভাঙলে তার দায়িত্ব নিজের। দল কোনও ভাবেই অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখলে বিশ্বাসী নয়। আইন আইনের পথে চলবে।’’