সকাল ১০টার পরেই থানায় জেনারেল ডায়েরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হতে রাত সাড়ে ১১টা বেজে যায়। কেন এত দেরি? সাড়ে ১৩ ঘণ্টা ধরে কী করছিল পুলিশ? সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি চলাকালীন এই প্রশ্নগুলির মুখোমুখি হতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। সে বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করলেন রাজ্যের আইনজীবী সঞ্জয় বসু।
বিবৃতিতে সঞ্জয় জানিয়েছেন, জেনারেল ডায়েরি এবং অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার সময় নিয়ে আদালতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বল বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, ৯ অগস্ট সকাল ১০টা ১০ মিনিটে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় টালা থানায় জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছিল। তার পর সেখানকার আধিকারিক ঘটনাস্থলে পৌঁছন। বিধি মেনে তার পরেই দায়ের করা হয়েছিল অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাটি (ইউডি)। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ইউডি মামলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের খাতায় তা নথিভুক্ত হতে সময় লেগেছে।
রাজ্যের যুক্তি, সারা দিন কাজ সেরে, মৃত চিকিৎসকের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে, রাতে থানায় ফেরেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিক। তার পর তিনি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাটি খাতায় নথিভুক্ত করেন। সেই কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কারণ, পুলিশের খাতায় মামলা নথিভুক্তিকরণের সময় হিসাবে রাত সাড়ে ১১টাই দেখাচ্ছে, যদিও দুপুরেই মামলা হয়ে গিয়েছে।
কেন রাতে এফআইআর দায়ের করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। সে বিষয়ে রাজ্যের তরফে আইনজীবী সিব্বল কলকাতা পুলিশের আইন উল্লেখ করে যুক্তি সাজান। তিনি আদালতে এ-ও জানান, রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এফআইআর দায়ের হলেও তা তদন্তে কোনও রকম বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।
আরজি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সমাজমাধ্যমে এক দল মানুষ ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন এবং রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ করছেন, আদালতে জানিয়েছেন রাজ্যের আইনজীবী। পুলিশের বিরুদ্ধে অশান্তির ছক কষা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। রাজ্য যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিকে সমর্থন করে, তা-ও জানান আইনজীবী। আদালত জানিয়েছে, এই ধরনের আন্দোলনের আগে পুলিশের কাছে সমস্ত তথ্য জমা দিতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে একটি পোর্টাল খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানানো যাবে। স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হামলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলরত চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধও করেছে শীর্ষ আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর।