কলকাতায় ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের একটি মুহূর্তে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে ‘বামন’ বলে সম্বোধন করেছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ এবং ঋষভ পন্থ। সেই মন্তব্যের জন্য তাঁরা ক্ষমা চেয়েছেন। এমনটাই জানিয়েছেন বাভুমা। পাশাপাশি, তিনি কোচ শুকরি কনরাডের ‘গ্রোভেল’ মন্তব্য নিয়েও মুখ খুলেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে একটি রিভিউ নেওয়ার আগে বিপক্ষ অধিনায়ককে ‘বামন’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ১৩তম ওভারে। বুমরাহের শেষ বলে সামনের পায়ে রক্ষণ করেছিলেন বাভুমা। বল লাগে তাঁর প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেন বুমরাহ।
আম্পায়ার সাড়া দেননি। তখন পন্থ এবং বাকিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন বুমরাহ। তার পরে বুমরাহই বলেন রিভিউ নেবেন না। কারণ বাভুমা ‘বাওনা’, অর্থাৎ তাঁর উচ্চতা কম। ‘বাওনা’ শব্দের অর্থ বামন। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কের উদ্দেশে এমন শব্দ প্রয়োগের জন্য অনেকেই সমালোচনা করেছেন বুমরাহের।
‘ক্রিকইনফো’ ওয়েবসাইটে এ প্রসঙ্গে বাভুমা লিখেছেন, “একটা ঘটনার কথা মনে আছে। ওরা (ভারতীয়েরা) নিজেদের ভাষায় আমাকে নিয়ে কোনও একটা মন্তব্য করেছিল। দিনের শেষে দু’জন সিনিয়র ক্রিকেটার, ঋষভ পন্থ এবং জসপ্রীত বুমরাহ আমার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছিল।”
বাভুমার সংযোজন, “ক্ষমা চাওয়ার সময় আমি তো বুঝতেই পারিনি কী নিয়ে কথা হচ্ছে। পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলাম। কারণ ওই সময় আমি কথাটা শুনতেই পাইনি। মিডিয়া ম্যানেজারের কাছে খোঁজ নিতে হয়েছিল। যা মাঠে হয়েছে তা মাঠেই থেকে গিয়েছে। তবে যা বলা হয়েছে সেটা ভুলে যাব না কখনও। আমার জ্বালানি এবং অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করবে সেটা। এখন ওদের প্রতি কোনও রাগ আর নেই।”
একই ভাবে, দ্বিতীয় টেস্টে বিতর্ক হয়েছিল কনরাডের ‘গ্রোভেল’ মন্তব্য নিয়ে। গুয়াহাটি টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষে ৫২১ রানে এগিয়ে থেকে কনরাড বলেছিলেন, ভারতকে পায়ের তলায় রাখতে চেয়েছিলেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওদের (ভারতীয় দলকে) পায়ের তলায় রাখতে চেয়েছিলাম। ওদের মুখের কথা কেড়ে নিতে চেয়েছিলাম। ওদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়ে ব্যাট করতে নামাতে চেয়েছিলাম।’’
কনরাড কথা বলার সময় ইংরেজিতে ‘গ্রোভেল শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। ক্রিকেটে শব্দটি বিতর্কিত। বর্ণবিদ্বেষমূলক শব্দ হিসাবে বিবেচিত হয়। ১৯৭৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সফরের আগে ইংল্যান্ডের তৎকালীন অধিনায়ক টনি গ্রেগ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন ক্লাইভ লয়েডদের উদ্দেশে। ক্ষুব্ধ লয়েড বলেছিলেন, ‘‘এই শব্দটি যে কোনও কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেবে। কারণ শব্দটি এক জন শেতাঙ্গ মানুষের মুখ থেকে বেরিয়েছে। বিশেষ করে তিনি আবার দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ।’’
দক্ষিণ আফ্রিকায় এক সময় এই শব্দটি ব্যবহার করা হত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের অপমান করার জন্য। স্বভাবতই কনরাডের মম্তব্যকেও অপমানমূলক বলেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
সেই প্রসঙ্গে বাভুমা লিখেছেন, “শুকরিকেও ‘গ্রোভেল’ মন্তব্যের জন্য অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। সাংবাদিক বৈঠকে আমাকেও চাপে পড়তে হয়েছিল। ওই মন্তব্যের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম, এর উত্তর শুকরিই দিতে পারবে।”
বাভুমা আরও লিখেছেন, “প্রথম বার শোনার পরেই মনে হয়েছিল কথাটার মধ্যে বিস্বাদ রয়েছে। তবে এটাও বুঝেছিলাম, একটা টেস্ট সিরিজ় কতটা উত্তেজক হতে পারেন। কারও কারও কাছে সেই টেস্টের মর্ম আলাদা হতে পারে। এক দিনের সিরিজ়ের পর কথা বলে শুকরি ব্যাপারটা মিটিয়ে নিয়েছে। তবে মন থেকে আমার মনে হয়, শুকরি কোনও ভাল শব্দ ব্যবহার করতে পারত। ও নিজেও এই কথাটাই বলে ছিল। সেটাই আমিও বলছি।”

