পুণেতে খরস্রোতা নদীর উপর ভেঙে পড়ল সেতু! নিহত অন্তত ৪

মহারাষ্ট্রের পুণের কাছে ইন্দ্রায়ণী নদীর উপর ভেঙে পড়ল একটি সেতু! রবিবার দুপুরে ওই দুর্ঘটনার সময় সেতু থেকে প্রায় ২০ জন নদীতে পড়ে যান। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস জানান, এখনও পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত হয়েছেন ৩২ জন, তাঁদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পুণের পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড় থানা এলাকার কুন্দমালা গ্রামের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ইন্দ্রায়ণী নদীর কাছে এই পুরনো সেতুটি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। সপ্তাহ শেষের ছুটিতে নদীর ধারে এবং পুরনো সেতুর উপর অনেক পর্যটকই ভিড় করেন। রবিবারও পর্যটকদের ভিড় ছিল সেতু এবং আশপাশের এলাকায়। দুর্ঘটনায় যাঁরা তলিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে মহারাষ্ট্র সরকার।

ইন্দ্রায়ণী নদীর উপর ওই সেতুটির দৃশ্য়ত জরাজীর্ণ অবস্থা। সেটি দিয়ে যান চলাচল অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে বর্ষাকালে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেলে, সেখানে খরস্রোত দেখার জন্য অনেকেই ভিড় করেন। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে, জলের তোড়েই ভেঙে গিয়েছে সেতুটি। স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীদের একটি দল ইতিমধ্যে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন। তলিয়ে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দলও সেখানে পৌঁছেছে।

সেতু বিপর্যয়ের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার জানান, সেতুটি খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। সেতুটির জন্য ৮ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে তিনি জেলাশাসকের থেকে তথ্য চেয়েছেন বলেও জানান পওয়ার। অপর উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্রের সব নদীর উপর সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই দুর্ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে। দুর্ঘটনার জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের প্রত্যেকের শাস্তি হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।”

মহারাষ্ট্রের এই সেতু বিপর্যয় নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক রেল দুর্ঘটনা, বিমান দুর্ঘটনা এবং এ বার সড়ক দুর্ঘটনা— পর পর এই ঘটনাগুলিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। পুণের কাছে ইন্দ্রায়ণী নদীর উপর সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনাতে মর্মান্তিক পরিণতির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

দুর্ঘটনাস্থলটি মহরাষ্ট্রের মভল বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। সেখানকার বিধায়ক সুনীল সেখলে জানান, ইন্দ্রায়ণী নদীর উপর ওই লোহার সেতুটি প্রায় ৩০ বছরের পুরনো। বস্তুত, গত দু’দিন ধরেই পুণের এই গ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার ফলে নদীর জলস্তরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনুমান করা হচ্ছে, নদীর জলের তোড়েই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকাবাসীরা দীর্ঘদিন এই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। গত ৪-৫ বছর ধরে এই সেতুটির কোনও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.