দার্জিলিঙে ফিরল জম্মু-কাশ্মীরে নিহত ক্যাপ্টেনের দেহ, ব্রিজেশের মা বললেন, ‘কষ্ট একটাই’

দার্জিলিঙে ফিরল জম্মু-কাশ্মীরের ডোডায় সেনা-জঙ্গির গুলির লড়াইয়ে নিহত ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপার কফিনবন্দি দেহ। বুধবার দার্জিলিঙের লেবংয়ের বড়াগিঙের বাসিন্দা ২৭ বছরের ক্যাপ্টেনকে শেষ বারের মতো দেখতে উপচে পড়ে ভিড়। সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা ব্যথিত। তবে তারও বেশি গর্বিত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ভুবনেশ থাপা এবং নীলিমা থাপা। ব্রিজেশের মা নীলিমা বললেন, ‘‘খারাপ লাগার থেকেও গর্ব বেশি হচ্ছে। তবে এটাও সত্যি যে ওর সঙ্গে আর কখনও দেখা হবে না।’’ ব্রিজেশের বাবা ভুবনেশের মন্তব্য, ‘‘আমার ছেলে দৃষ্টান্ত তৈরি করল।’’

বাগডোগরা বিমানবন্দরের আলফা জ়োনে অবতরণ করানো হয়েছিল ক্যাপ্টেন ব্রিজেশের দেহ। সেখান থেকে ব্যাঙডুবি সেনাছাউনিতে নিয়ে আসা হয়। শ্রদ্ধা জানানো হয় শহিদকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা, গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এগ্‌জ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান অনিত থাপা, জেলাশাসক-সহ প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। বুধবার ব্যাঙডুবি সেনাছাউনিতেই থাকবে ব্রিজেশের দেহ। বৃহস্পতিবার সকালে লেবংয়ের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হবে কফিনবন্দি দেহ।

ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা।

ব্যাঙডুবি সেনাছাউনিতে দাঁড়িয়ে ব্রিজেশের মা বলেন, ‘‘দেশের জন্য বলিদান দিয়েছে নিজেকে। এটাই আমার গর্ব। ওর এই বলিদান নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে।’’ অন্য দিকে, ব্রিজেশের বাবা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ভুবনেশ বলেন, ‘‘সকলেই যদি চাকরি বা ব্যবসা করে তা হলে দেশের কাজ কে করবে। আমার ছেলে একটি উদাহরণ তৈরি করল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার বাবা, আমি— সকলেই সেনায় কর্মরত ছিলাম। সেনার জন্য কাজ করা আমাদের রক্তে।’’

ব্রিজেশের স্কুলের পড়াশোনা দার্জিলিঙে। তার পর মুম্বইয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে বিটেক পাশ করে ‘কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস’ পরীক্ষায় বসেন। ২০১৮ পরীক্ষায় ওই পরীক্ষায় পাশ করেন পরের বছর যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। দু’বছর ১০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের মোতায়েন ছিলেন তিনি। এর পর তাঁকে ভারতীয় সেনার বিশেষ বিভাগ ১৪৫ আর্মি এয়ার ডিফেন্সের অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা সেনাছাউনিতে বদলি করা হয়েছিল। সেখানে ব্রিজেশ এ-কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন।

বাবা-মায়ের সঙ্গে ব্রিজেশ থাপা।

সোমবার সন্ধ্যায় জম্মুর ডোডা জেলার দেশা জঙ্গল এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল ব্রিজেশের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনার একটি দল। কয়েক জন জঙ্গির লুকিয়ে থাকার খবর ছিল তাঁদের কাছে। জঙ্গলে অভিযানের সময় আচমকা তাঁদের দিকে ধেয়ে আসে গুলি। পাল্টা জবাব দেন জওয়ানেরা। শুরু হয় দু’পক্ষের গুলির লড়াই। প্রায় ২০ মিনিট চলা ওই লড়াইয়ে গুরুতর জখম হন ব্রিজেশ-সহ চার জন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও কাউকেই বাঁচানো যায়নি।

জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিজেপি সাংসদ রাজু বলেন, ‘‘প্রতি দিন পাকিস্তান যে ভাবে ভারতকে উত্ত্যক্ত করার মতো কাজ করে চলেছে, ভারত সরকারের তার কড়া জবাব দেওয়া উচিত। তার জন্য আরও একটা এয়ার স্ট্রাইকের প্রয়োজন রয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সীমান্তে আমাদের জওয়ানেরা আমাদের সুরক্ষা দেন। আমাদেরও কর্তব্য, সৈনিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সে জন্য আমি মনে করি, একটি এয়ার স্ট্রাইকের প্রয়োজন আছে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.