দলাপাকানো দেহ, পুড়ে যাওয়া শরীর। অহমদাবাদে বিমান বিপর্যয়ের পর তিন দিন কেটে গেলেও এখনও এআই ১৭১-এ থাকা বহু যাত্রীর দেহ শনাক্ত করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ডিএনএ পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই মতো ওই যাত্রীদের পরিজনদের কাছ থেকে ডিএনএ-র নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেই পরীক্ষায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৭ জন যাত্রীর দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। ২৫টি দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
তবে বাকি যাত্রীদের পরিজনেরা এখনও অহমদাবাদের সিভিল হাসপাতাল এবং অন্যত্র অপেক্ষা করছেন। কখন নিহত পরিজনের দেহ বা দেহাংশ হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা জানতে উদ্গ্রীব তাঁরা। জরুরি ভিত্তিতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দেহ শনাক্তকরণের কাজ করে চলেছে গুজরাতের ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল) এবং দেশের ন্যাশনাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এনএফএসইউ)। এফএসএল-এর ডিরেক্টর এইচপি সাঙ্ঘভি জানিয়েছেন, যে হেতু নিহতদের দেহ প্রচণ্ড উত্তাপে পুড়ে গিয়েছে, তাই ফরেন্সিক পরীক্ষা ছাড়া অন্য প্রথাগত উপায়ে দেহ শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
রবিবার সন্ধ্যায় গুজরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুষিকেশ পটেল জানান, এখনও পর্যন্ত ৪৭ জনের দেহ ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত করা গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা ২৭৪ বলে জানিয়েছেন তিনি। রবিবারই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর দেহ শনাক্ত করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সিভিল হাসপাতালে রূপাণীর দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তার পর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজকোটে। বিকেলে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রূপাণীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন রূপাণী। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতিতে মঙ্গলবার রাজকোটে এবং বুধবার গান্ধীনগরে শোকসভা হবে। ইতিমধ্যেই এক দিনের শোকদিবস ঘোষণা করেছে গুজরাতের বিজেপি সরকার। সোমবার গুজরাতের সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
গত ১২ জুন অহমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকগামী বিমানে উঠেছিলেন রূপাণী। লন্ডনে কন্যার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ওই বিমান রানওয়ে ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙে পড়ে। সামনের একটি বিল্ডিংয়ে ধাক্কা খেয়ে বিমানটিতে বিস্ফোরণ হয় এবং আগুন জ্বলে ওঠে। এয়ার ইন্ডিয়ার অভিশপ্ত সেই এআই১৭১ বিমানে রূপাণী-সহ মোট ২৪২ জন ছিলেন। এক জন মাত্র যাত্রী বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন। ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে এখনও পর্যন্ত অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৭৪।