মাথায় পাথর চন্দনার, সঙ্গে স্বামী শ্রাবণ, তৃণমূলকে জবাব দিতে পুরনো কাজে ফিরলেন বিজেপি বিধায়ক

স্বামী শ্রাবণ বাউরি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। চন্দনা বাউরি সেখানে জোগাড়ের কাজ করতেন। ২০২১ সালের পর চন্দনা বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু আবার সেই পুরনো কাজে ফিরতে হল বিধায়ককে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করে বাড়ির সামনে গ্রামের মূল রাস্তা সারাইয়ে হাত লাগালেন বিধায়ক ও তাঁর স্বামী। বাঁকুড়ার শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা মাথায় করে পাথর গুঁড়ো নিয়ে রাস্তায় ফেললেন। বেলচা নিয়ে সেই পাথর তোলার কাজে সাহায্য করলেন তাঁর স্বামী। বিধায়ককে এমন ভূমিকায় দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। যদিও তৃণমূলের দাবি, সবই নাটক। শুধু শুধু প্রচারের জন্য এ সব করছেন বিজেপি বিধায়ক।

একটি রাস্তা দিয়ে আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের যাতায়াত। স্বয়ং বিধায়ককেও যাওয়া-আসা করতে হয় ওই পথ দিয়ে। চন্দনার অভিযোগ, বার বার স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে দরবার করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তা সারানোর উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। তাই স্বামীকে নিয়ে রাস্তা সারাই করতে নেমেছেন তিনি।

শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাড়ি গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের কেলাই গ্রামে। ওই ব্লকের রাঙামেট্যা থেকে কেলাই হয়ে রাজামেলা গ্রামে যাওয়ার মূল রাস্তা দীর্ঘ দিন ধরেই বেহাল। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, যখন তখন দুর্ঘটনা হচ্ছে। রাস্তার মাঝে থাকা গর্তে বর্ষার জল জমেছে। বিধায়কের অভিযোগ, “বিষয়টি বার বার প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু যে হেতু আমি বিজেপির বিধায়ক, তাই এই রাস্তাও বঞ্চনার শিকার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি নিজের বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের টাকা থেকে এই রাস্তা মেরামতের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শাসকদলের চাপে স্থানীয় প্রশাসন সেই কাজটিও করতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে নিজের বেতনের টাকা থেকে কিছু পাথরের গুঁড়ো আনিয়ে আমি এবং আমার স্বামী শ্রম দিয়ে রাস্তার গর্ত বুজিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি।”

বিধায়ককে এ ভাবে কাজ করতে দেখে রাস্তা মেরামতির কাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় দু’একজন বিজেপি কর্মী। তাঁদের স্বেচ্ছাশ্রমে দিয়ে প্রায় একশো মিটারের মতো রাস্তা সারাই হয়েছে। রবিবার দুপুরে বিধায়কের এই রাস্তা মেরামত করার ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নেটাগরিকরা বিধায়কের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। বিধায়কের রাস্তা সারানো নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বিপত্তারণ মণ্ডল বলেন, “এই রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছিল। অবস্থা দেখে বিধায়ক নিজে এ ভাবে রাস্তা মেরামতির কাজে হাত লাগাবেন, তা ভাবাই যায় না।”

তবে তৃণমূলের বক্তব্য ভিন্ন। গঙ্গাজলঘাঁটি সাংগঠনিক ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তথা গঙ্গাজলঘাঁটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নিমাই মাজি বলেন, “রাঙামেট্যা থেকে রাজামেলা গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থা দীর্ঘ দিন ধরে খারাপ ছিল। কিছু দিন আগেই পথশ্রী প্রকল্পে ওই রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা এবং অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শালতোড়ার মানুষ কোনও উন্নয়নমূলক কাজে বিধায়ককে পান না। এখন বিধায়ক রাস্তা মেরামতির নামে নাটক করছেন।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.