মডেল বিদিশা দে মজুমদারের রহস্যমৃত্যু এ বার মোড় নিল ভিন্ন দিকে। ওই কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে অনুভব বেরা নামে পশ্চিম মেদিনীপুরের তাঁতিগেড়িয়ার এক যুবকের। ফেসবুকে বিদিশার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অনুভবের। সেই অনুভবকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন বিদিশার বান্ধবীরা। এক বান্ধবীর সঙ্গে বিদিশার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটেও বার বার উঠে এসেছে অনুভবের নাম। বিদিশার পাঠানো ওই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাগুলিতে তাঁর আক্ষেপ এবং হতাশা মিশে রয়েছে। যদিও বিদিশার বান্ধবীদের তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অনুভব।বুধবার মৃত্যু হয়েছে বিদিশার। তার আগে পর্যন্ত বিদিশার সঙ্গে কথা হয় তাঁর বান্ধবী দিয়া দাসের। হয় হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও। সেই চ্যাট প্রকাশ্যে এনেছেন দিয়া। বিদিশা এবং দিয়ার চ্যাটে বার বার উঠে এসেছে অনুভবের প্রসঙ্গ। সেখানে বিদিশা লিখেছেন, ‘অমি বাঁচতে পারব না অনুভবকে ছাড়া।’ আবারও কখনও লিখেছেন, ‘আমি শুধু ওকে চাইতাম।’ আবার লিখেছেন, ‘বাই এনি চান্স আমার কিছু হয়ে গেলে ওকে বলিস, খুব ভালবাসতাম। ওকে কারও সঙ্গে দেখতে পারতাম না।’ আবার লিখেছেন, ‘আমার মা, বাবার থেকেও ওকে অনেক বেশি ভালবাসতাম।’
এ নিয়ে বিদিশার বান্ধবী দিয়া বলেন, ‘‘বিদিশা আমাকে অনেক দিন ধরেই বলত— ও ছেলেটাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। কিন্তু ছেলেটার অনেক বান্ধবী রয়েছে। বিদিশার আত্মহত্যার পর, আমি ছেলেটাকে ফোন করি। ওকে বলি, ‘তুমি কি আসবে না অনুভবদা?’ ও তখন বলে, ‘না, আমি এত দূর থেকে যেতে পারব না।’ আমি বলি, ‘আমরা নৈহাটি, টালিগঞ্জ, নিউটাউন থেকে চলে আসছি। তুমি যেতে পারবে না?’ ও উত্তর দেয়, ‘না।’ আমি তখন ওকে জিজ্ঞাসা করি, ‘তুমি ওকে ভালবাসতে না?’ তখন ও বলে, ‘আমি তো ওকে কোনও দিন বলিনি, আই লাভ ইউ।’ আমি ফোনে পাল্টা জিজ্ঞাসা করি, ‘আই লাভ ইউ না হয় বলোনি, কিন্তু নাইট স্টে-তো করতে।’ ও তখন বলে, ‘আমি তো জোর করে কিছু করিনি। ও-ও আমার সঙ্গে করেছে।’ এগুলো কোনও কথা হল! অথচ ছেলেটা ওকে বলত— আমি তোমাকে ভালবাসি, কিন্তু কোনও দিন বিয়ে করতে পারব না।’’
পেশায় ব্যবসায়ী অনুভবের সঙ্গে বিদিশার পরিচয় ফেসবুক মারফত। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অনুভবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে বিদিশার শুধুমাত্র বন্ধুতার সম্পর্ক ছিল। ও আমাকে অনেক বারই বলেছিল সম্পর্ক তৈরি করার কথা। তবে আমি ওকে বলি, কোনও সম্পর্কে জড়াতে পারব না। আমি যতটা পেরেছি ওকে মানসিক ভাবে শক্তি জোগানোর চেষ্টা করেছি। ও ডিপ্রেশনে ভুগছিল। ও কাজ পাচ্ছিল না। সেটা আমাকে বলেছিল। ও বলত, ‘আমি কাজ পাচ্ছি না। আমি আর বাঁচব না।’ আমি বলেছিলাম, ‘চেষ্টা করো, আজ না হয় কাল ঠিক হবে।’ এ সব কারণে ও ডিপ্রেসড ছিল। ও যত বার সম্পর্ক তৈরির কথা আমাকে বলেছিল, তত বারই আমি না বলেছি। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ফেসবুকে আমাদের আলাপ হয়।’’
অনুভব আরও বলেন, ‘‘আমার ফোন অন রয়েছে। পুলিশ ফোন করলে অবশ্যই কথা বলব। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করব। আমি বিষয়টা প্রথমে মেনে নিতে পারিনি। ভেবেছিলাম, ওর বান্ধবীরা মিলে আমার সঙ্গে মজা করছে। বিশ্বাসই করতে পারিনি। রাতে খবরে যখন দেখি তখন বুঝি ঘটনাটা সত্যি। পল্লবীর মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছিল। তবে আমি ওর এ ভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না। ও ঝাড়গ্রামে এসেছিল। সেখানে আমাদের দেখা হয়েছিল।’’ বিদিশা মৃত্যুরহস্যের উপযুক্ত তদন্তও দাবি করেছেন অনুভব।