‘ইন্ডিয়া’ নামের ব্যবহার স্থগিত করে ‘ভারত’।

[‘ইন্ডিয়া’ কথাটি ভারতীয় ঐতিহ্যানুগ না হলেও নামটি ছাড়ছে না এই দেশ। কিন্তু এখন থেকে ‘ভারত’ নামটিই সর্বত্র ব্যবহার করতে চাইছে। এটা একটি আত্মমর্যাদার প্রশ্ন, স্বাভিমান জুড়ে আছে এই প্রস্তাবে। হাজার হাজার বছর ধরে যে নামে দেশের পরিচিতি ও প্রসিদ্ধি, আত্মনির্ভর ভারত সেই নামটি কেবল নিতে চায়। ধারের জীবন, বিদেশী শাসনের চিহ্ন মুছে ফেলতে চায় ভারত। আর একটি দেশের নাম দেশীয় ও বিদেশী ভাষায় আলাদা হতে পারে না।]

কবি জীবনানন্দ দাশের পংক্তি ধার করে বলতে পারি (‘হায় চিল’ কবিতা),
“কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!”
নামকরণের মধ্যেও যদি কোনো বেদনা থাকে, তা মুছে ফেলাই উচিত। I.N.D.I.A খুঁড়ে খুঁড়ে আগেই হেরে যাওয়া চিলের মতো দলগুলির বেদনাবিলাস বন্ধ করলেই ভালো। সারা বিশ্বে বেদনা মুছে ফেলার বহু উদাহরণ আছে। ইন্ডিয়া নামের মধ্যে কেবলই পরাধীনতার গ্লানি, কেবলই পরিচয়ের সঙ্কট (Identity crisis), কেবলই আত্মবিস্মৃতি, মহামৃত্যু লুকিয়ে আছে। এই নাম সঙ্গী করে নতুন সূর্যের উদয় অসম্ভব।

ভারতীয় সংবিধানের গোড়াতেই উল্লেখ রয়েছে, “India, that is Bharat, shall be a union of states.” (Part I: 1(1) Name and territory of the Union). অতএব ‘ভারত’, এই একমাত্র নামে যদি দেশকে অভিহিত করার চেষ্টা হয়, তবুও তা সংবিধান-বিরোধী হবে না। ‘ভারত’ নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে হাজার হাজার বছরের দেশীয় ঐতিহ্য আর ইতিহাস। ‘ভারত’ নামকরণের মধ্যে দাসত্বের কোনো লক্ষ্মণই নেই, পরাজয়ের নঞর্থকতাও নেই। যে দেশ স্বাধীন এবং সার্বভৌম, যে দেশ নিজের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে জানে; যে দেশ সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সে দেশের নাগরিক কেনই বা লুণ্ঠনকারীদের নামকরণ আজও অবনত মস্তকে মেনে নেবে? যদি বিশ্বের বহুদেশ আপন গরিমায়, আপন অস্মিতায়, শিকড় সংস্কৃতির আবহে অতল গভীরতা থেকে বেরিয়ে নিজের দেশকে নতুনভাবে ডাকতে পারে, তাহলে এদেশই বা কোন্ ছদ্মবেশী বিদেশি শক্তির কথায় নাম-পরিবর্তনে ক্ষান্তি দেবে? ভারত নাম সংবিধানের পাতাতেই রয়েছে। দেশের নাম তো ‘ভারত’-ই! যার নাম ‘ভারতরত্ন’-র জন্য সুপারিশ করলেন মাননীয়া, হতাশ করে তিনিই দেখছি ‘ভারত’ নামে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। সুনীল গাভাসকারও ‘ভারত’ নামের পক্ষে। ‘ভারত’ নামের পক্ষে গোটা দেশবাসী, কিছু অপদার্থ রাজনীতিবেত্তা এবং তাদের দোসর ছাড়া।

কতকগুলি সুবিধাবাদী, দুর্নীতিপরায়ণ, প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক দলের কনসার্ট (সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মহাঠগবন্ধন’ বলে খ্যাত), ২৪-এর পরাজয়ের ভয়ে কাঁটা, রাজনৈতিক দেউলিয়ার দুরন্ত দিন গুনছে, তারাই এবার ‘INDIA’ শব্দটিতে ভর করে নির্বাচনী তরী পেরোতে চাইছে। কিন্তু সুখের কথা, জনগণ সেই প্রবণতা ধরতে পেরে গেছে। সেটা যে বিদেশি ভাবনার, সেটা যে বাইরের তরী নোঙর করার মতোন ব্যাপার, তার খবর রাখেনি তারা! ‘I.N.D.I.A’ এবং ‘INDIA’ এই দু’টি কথাও যে এক নয়, হতেও পারে না, তা প্রথম শ্রেণির ছাত্র বলে দিতে পারবে। ‘I.N.D.I.A’-র প্রবক্তারা বরং তাদের ক্লাস-ওয়ানের ছেলে-মেয়ে/নাতি-নাতনী/ভাইপো-ভাইঝির কাছে জেনে নিক, আলাদাটা কোথায়! একটি দেশের নাম ব্যবহার করে জনগণ বা ভোটারকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতারণা করার অধিকার নেই ‘I.N.D.I.A’ জোটের। অনৈতিক এই জোটের ভরাডুবি তাই সময়ের অপেক্ষা।

যে ‘কংগ্রেস’ নামে প্রাক্-স্বাধীনতা পর্যায়ে একটি মঞ্চে বহুমাত্রিক মতাদর্শের দেশহিতৈষী বহু মানুষ একত্রিত হয়ে ভারতমাতার শৃঙ্খলা-মোচন করতে সমবেত হয়েছিলেন, স্বাধীনতার পর সেই ‘কংগ্রেস’ নামটি ব্যবহার করে ভোট চাইতে যাওয়াই ছিল অন্যায় এবং অসাধুতা। নীতিগতভাবে অনুচিত ছিল সেই কাজ। স্বাধীনতার পর সেটি কি সকলের গ্রহণযোগ্য একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক মঞ্চ হয়ে ভারতীয় ভাবাবেগের সংগঠন রূপে রাজনীতি বিযুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা উচিত ছিল না? কেন কংগ্রেস/তৃণমূল কংগ্রেস ইত্যাদি কংগ্রেসী শব্দবন্ধ ব্যবহার করে আজও দলের নাম রয়েছে, সেই নিয়েই তো দেশব্যাপী বড়সড় আলোড়ন ও আইনী লড়াই হওয়া উচিত!

রাজা ভরতের নামে দেশের নাম ‘ভারতবর্ষ’, বা ‘ভারত’। ‘বর্ষ’ কথাটির অর্থ বিস্তৃত স্থান, মহাদেশ অথবা উপমহাদেশ। যে নামটির মধ্যে কোনো বিশেষ জাতি বা ধর্মসম্প্রদায়ের সম্পর্ক নেই, সেই অসাম্প্রদায়িক নামটিকে যদি দেশের একমাত্র নাম বলে গ্রহণ করি, তাহলে আপত্তি কোথায়?

আপত্তি সম্ভবত ‘ভরত’ নামটিই, যে রাজার নাম হিন্দু পুরাণের পাতায় রয়েছে! আচ্ছা, হিন্দু পুরাণগুলি কি একটি দেশের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য নয়? তাকে কি কেবল নির্দিষ্ট ধর্মের গণ্ডিতে ফেলে দেওয়া যায়? এ তো আফগানিস্তানে তালিবানদের বৌদ্ধমূর্তি ধূলিসাৎ করার মতোই অপরাধ! I.N.D.I.A জোটের আঞ্চলিক দলগুলির অনেকে সরাসরি, অনেকে ঠারেঠোরে সনাতন হিন্দুধর্মের বিরোধী, মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেছে, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর পুত্র, তথা রাজ্যের এক মন্ত্রী, ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্টালিন বলেছেন, “আমাদের প্রথম কাজ হল বিরোধিতা নয়, সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলা। … কিছু জিনিস আছে, যার বিরোধিতা যথেষ্ট নয়, তা নিশ্চিহ্ন করা দরকার। যেমন করোনা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির বিরোধিতা নয়, তাদের নিশ্চিহ্ন করা দরকার, তেমনই সনাতন আদর্শকেও।” ভাবুন, কত বড় সাহস, কতবড় ঔদ্ধত্য ও বিরোধিতার কথা! সরাসরি সনাতনী হিন্দু ধর্মের বিরোধিতা করেছেন তিনি। ‘ভারত’ নামের বিরোধিতা যে এদের মতো দলই করবে, এরাই যে অযৌক্তিক বিরোধিতার হকদার হবে, তা বোঝাই যাচ্ছে৷

ইন্ডিয়া নামটির মধ্যে রয়েছে ভারতবর্ষকে ভারতের বাইরের মানুষ কোন্ অর্থে এবং কোন্ দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখছে তার প্রকাশ। India বলতে Indus river বা সিন্ধুনদের তীরবর্তী ও পার্শ্ববর্তী এলাকা বোঝায়। রাজা ভরত কি কেবল এইটুকু ভূ-খণ্ডের অধিপতি ছিলেন? তা তো নয়! বিদ্যাসাগরের ‘শকুন্তলা’ গ্রন্থে রয়েছে, কাশ্যপ মুনি রাজাকে বললেন, “বৎস! তোমার এই পুত্র সসাগরা সদ্বীপা পৃথিবীর অদ্বিতীয় অধিপতি হইবেক, এবং সকল ভুবনের ভর্তা হইয়া উত্তর কালে ভরত নামে প্রসিদ্ধ হইবেক।” মনে রাখতে হবে বিদ্যাসাগরের ‘শকুন্তলা’ গ্রন্থটি কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান-শকুন্তলম’ নাটকের আখ্যানভাগ অবলম্বনে মাধুর্য-সম্পন্ন স্বকীয় বাংলা গদ্যরচনা। অর্থাৎ কালিদাসের ভাব-অনুভব এখানে পুরোমাত্রায় রয়েছে। এই ভরতের নামেই ভারতবর্ষের নামকরণ। তিনি রামানুজ ভরত নন। তিনি হস্তিনাপুরের রাজা দুষ্যন্ত এবং শকুন্তলার সন্তান ভরত, তাঁর বাল্যনাম সর্বদমন। মহর্ষি মারীচের আশীর্বাদে ভরত চক্রবর্তী রাজা ও সপ্তদ্বীপবিজেতা হন। বিদ্যাসাগরের ‘শকুন্তলা’ শুরু হচ্ছে এইভাবে, “অতি পূর্ব কালে, ভারতবর্ষে দুষ্যন্ত নামে সম্রাট ছিলেন।”

ভরতের বংশধরেরাই ভারত নামে পরিচিত। অর্থাৎ ‘ভারত’ মানে ‘ভারত’ শাসিত স্থান। ভারতীয় উপমহাদেশ এক অখণ্ড ও বিস্তীর্ণ ভারত, যা কেবল সিন্ধুনদ পার্শ্ববর্তী এলাকা দিয়ে ক্ষুদ্র দেখানো যায় না। দেব-পূজার জলশুদ্ধিতে ভারতের নদীগুলির উল্লেখযোগ্য সহাবস্থান দেখি, এক সামগ্রিকতার চিত্রকল্প রচনা করি।
“ওঁ গঙ্গে চ যমুনা চৈব গোদাবরি সরস্বতী
নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু।।”
সিন্ধু নদী ছাড়াও গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরি, সরস্বতী, নর্মদা, কাবেরি নিয়ে এ দেশ। কেবল সিন্ধুর আবহে দেশের নামটি ‘India’ তাই ক্ষুদ্রতার দ্যোতক। বিদেশিরা এদেশকে ক্ষুদ্র-খণ্ড করে দেখবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

বিষ্ণুপুরাণে রয়েছে,
“উত্তরং যৎ সমুদ্রস্য হিমাদ্রেশ্চৈব দক্ষিণম্।
বর্ষং তৎ ভারতং নাম ভারতী যত সন্ততিঃ।।”
উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের মধ্যবর্তী আসমুদ্র হিমাচলই হচ্ছে ভারত। তারমধ্যে রয়েছে পার্বত্যভূমি, সমভূমি, মালভূমি, উপকূলভূমি। এদিকে ‘India’ শব্দটি আদ্যন্ত বিদেশি। সপ্তদশ শতক থেকে নামটির প্রচলন শুরু হয়েছে। অর্থাৎ কালের গণ্ডিতে নামটি ভারতবাসীর জন্য অর্বাচীন। শব্দটির মধ্যে বিদেশি প্রভাবও প্রভূত পরিমাণে রয়েছে। গ্রীক শব্দ থেকে India শব্দটির উৎপত্তি বলে ভাষাবিজ্ঞানীরা মনে করেন তারমধ্যে পরত লাগে ল্যাটিন ভাষার, পড়ে পারসিকের প্রভাবও, ফরাসী Ynde বা Inde হয়ে প্রাচীন আধুনিক ইংরেজিতে হয়ে গেল ‘Indie’. গ্রীকেরা একসময় ভারতবাসীকে ‘ইন্দোই’ বলত, যার অর্থ ‘ইন্দাস’ নদীর অববাহিকার অধিবাসী। অতএব এই বিদেশি নামকরণে দেশের কোন গৌরব থাকতে পারে না। গৌরব একমাত্র সেখানেই, যেখানে নিজের দেশকে স্বনামে ডাকতে পারবে ভারতবাসী। ‘ভারত’ নামকরণ তাই দেশের আবেগ, মানুষের অংশগ্রহণ। এখানে বিবেকের প্রশ্ন, নৈতিকতার প্রশ্ন, স্বনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নও আসবে। যে বিদেশি শাসক আমাদের তাচ্ছিল্য করে ‘নেটিভ’ বলে ডেকেছে, তাদের দেওয়া নামকরণটিই কি জাতীয় অস্মিতার রূপক-সংকেত হতে পারে? তাহলে ভারত নামের বিরোধী কারা? বদল একদিন তো আসতই। এখন সেই বদল পূর্ণপ্রাণে চাওয়ারই সময় —
“পূর্ণ প্রাণে চাবার যাহা রিক্ত হাতে চাস নে তারে,
সিক্তচোখে যাস নে দ্বারে॥”
ভারত আজ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির রত্নমালা আনার জন্য, ভারতমাতার উজ্জ্বল আসন প্রতিষ্ঠা করে G20 সামিটে অতিথিদের সগৌরবে ডেকেছে এই নতুন ভারত দেখানোর জন্য। এখনই তো দেখানোর সময়। অতএব, India -র বদলে ‘Bharat’ লেখা নেমপ্লেটে সমস্ত দেশের সংবাদমাধ্যমের ঝলক লক্ষ শিখায় জ্বলছে, একই সঙ্গে জ্বালাচ্ছে ভারতবিরোধীদেরও।

‘ভারত’ নামকরণ নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল-বামপন্থীদের এখন ‘যেতেও কাটে আসতেও কাটে’ অবস্থা, শাখের করাত। সিপিএমের সময় বাংলায় পাড়ার পাড়ায় একটি গণসঙ্গীতের রেকর্ড বাজত। ক্যালকাটা ইউথ কয়্যারের একটি সঙ্গীতের মিউজিক ডাইরেক্টর ছিলেন ওয়াই.এস. মুল্কি —
“ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম
আমরা রয়েছি সেই সূর্যের দেশে,
লীলা চঞ্চল সমুদ্রে অবিরাম
গঙ্গা যমুনা ভাগীরথী যেথা মেশে।”
সাতমন তেল পুড়িয়ে এইসব গান শুনিয়ে এখন ওদের হচ্ছে টা কী! বরং রাজ্যের অশুভ জোটবন্ধনের কারিগরদের কাছে প্রস্তাব, আপনারা বরং মাধুরী চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ওই গানটিও ইউটিউবে শুনে নিন,
“নিজেরে হারায়ে খুঁজি
তোমারই নয়ন মাঝে
চাহিতে পারিনি কিছু
চাহি না মরি যে লাজে।।”
নিজেকে খোঁজার প্রয়াস এখন থেকেই শুরু করুন, অনেক হাহাকার লুকিয়ে আছে আপনাদের জীবনচর্যায় এবং মানসচর্চায়; অনেক দেশবিরোধিতা আছে, এবার দেশীয় ঐতিহ্যে নিজের দলকে প্রকৃত অর্থে ভারতীয় করে তুলুন। হ্যাঁ করুন তো দেখি, একটি দল ‘ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (চৈতন্যবাদী)’, কিংবা ‘ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (বিবেকানন্দবাদী)! পারবেন? আর হ্যাঁ, স্বামীজির ‘স্বদেশমন্ত্র’-টাও মনে রাখবেন। তিনি পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরামুখাপেক্ষা, দাসসুলভ দুর্বলতা পরিত্যাগ করতে বলেছেন আমাদের। আপনাদেরও যেন তা মনে থাকে!

আর যিনি ‘ভারতমাতা’ শব্দটিকে unparliamentary বলেছেন, ইতিহাস তাঁকে কোনোদিনই ক্ষমা করবে না। স্বামীজি, সিস্টার নিবেদিতা, ডি. এল. রায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রীঅরবিন্দ প্রমুখ মনীষীকে অপমান করেছে তাঁর এই উক্তি। এই মনীষীরা ‘ভারতমাতা’ শব্দটি নানান সময় গৌরবের সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। তাই জনগণের দরবারে সেই অপরিপক্ক রাজনীতিবিদের সাজা পেতেই হবে।

কেউ কেউ বলছেন এক প্রতিবেশী দেশ নাকি ‘ছেড়ে দেওয়া’ ইন্ডিয়া নামে নিজের দেশের নামকরণ করবে। তাই নাকি? তাহলে ‘Calcutta’ ছেড়ে দেওয়া নামটি আর এক প্রতিবেশী দেশ, তার একটি শহরের জন্য ব্যবহার করুক! জিন্না সাহেব তো Calcutta পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নিতেই চেয়েছিলেন, শ্যামাপ্রসাদের জন্য পারেন নি। এখন পরিত্যক্ত নামগুলিই না হয় ব্যবহার করে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে নিক। কী বাঙালি, মেনে নেবেন তো? ক্যালাকাটা নাম হচ্ছে কিন্তু পূর্ব দেশের ওই শহরটার! শহরের যাবতীয় হিন্দু নিধনের ইতিহাস ‘ঢাকা’ দেওয়া যাবে! পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটি যদি পরিত্যক্ত ‘ইন্ডিয়া’ নামটি শেষ পর্যন্ত নিয়েই নেয়, তবে প্রকারান্তরে সেই দেশ কিন্তু ‘অখণ্ড ভারত’ তৈরির ফাঁদে পা দিয়ে ফেলবে! ভাবুন, ভাবুন, ভালো করে ভাবুন, কমরেড! নতুবা এই ‘সাড়েচ্ছয়ানা’ কথা রটাবেন না। এমনিতেই সে দেশের সার্বিক অবস্থা শোচনীয়। দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। সেদেশের মানুষ দাবী তুলবে এবার তারা ফেলে দেওয়া নাম না কুড়িয়ে সরাসরি ভারতেই যুক্ত হতে চান, কারণ তারা ক্ষুধার অন্ন পেতে চান, বাঁচতে চান, সেদেশ তাদের সে ব্যবস্থা করতে পারে নি, কেবল ভারতের বিরুদ্ধে ‘কাঠি’ করে গেছে। পারবেন তো আপনারা সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে?

পরিশেষে ভারতপন্থী বিজ্ঞানী, ট্যাক্সোনমিস্ট (উদ্ভিদবিদ ও প্রাণীবিদ), কৃষিবিজ্ঞানীদের অনুরোধ জানাবো, বিজ্ঞানসম্মত নামে যে গাছ, যে প্রাণীর নামে ‘indica’ কথাটি যুক্ত রয়েছে সেখানে এখন থেকে যেন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এবং বিজ্ঞানীমহলে তার বদলে ‘bharatam’ বা ‘bharata’ কথাটি চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি। জ্ঞানবিজ্ঞানের মহলে পরিবর্তন একটি দীর্ঘস্থায়ী ও সদর্থক পরিবর্তন হয়, মানুষ সঠিকভাবে জানতেও শেখে। যেমন আমের বোটানিক্যাল নাম Mangifera indica, তার নামকরণ করতে হবে Mangifera bharata. জীববিদ্যায় ইন্ডিয়ান সেন্টার অফ অরিজিন অথবা হিন্দুস্থান (বিদেশি মুসলমান রাজশক্তি এই নামে ভারতকে ডেকে এসেছে) সেন্টার অফ অরিজিনের বদলে নিউ নোমেনক্লেচার হোক Bharatiya centre of origin.

তালিকাটি দীর্ঘ, স্বাভিমান ও স্বাজাত্যবোধের এটি একটা বড়কাজ।

কল্যাণ গৌতম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.