মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন বাংলায়। উত্তরবঙ্গের বালুরঘাট এবং রায়গঞ্জের দু’টি সভা থেকেই তিনি রামনবমী নিয়ে বার্তা দিয়ে গিয়েছেন। মোদী বলেছেন, ‘‘এ বারের রামনবমী অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই প্রথম এমন রামনবমী হচ্ছে, যখন অযোধ্যার ভব্য মন্দিরে রামলালা বিরাজমান। আমি জানি, তৃণমূল সব সময় রামনবমী পালনে যথাসম্ভব বাধা দিয়ে এসেছে। নানা রকম চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু জয় পেয়েছে সত্য। আদালতের রায়ে আগামিকাল (বুধবার) সম্পূর্ণ শক্তি ও ভক্তির সঙ্গে রামনবমী পালন করা হবে।’’
মোদীর বার্তার আগেই অবশ্য রাজ্য বিজেপির প্রস্তুতি ছিল রামনবমী নিয়ে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ৭ এপ্রিল থেকেই রামনবমী পালন শুরু করে দিয়েছে রাজ্যে। অযোধ্যায় রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠার পরে গোটা দেশে এই উৎসবের নতুন নাম দিয়েছে পরিষদ— ‘রামমহোৎসব’। ভোটের মধ্যেও গোটা দেশে এক পক্ষকাল ধরে সেই ‘মহোৎসব’ পালন করার কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু বুধবার, রামনবমীর দিন দেখা গেল, রাজ্যের ৪২টি আসনেই বিজেপি প্রার্থীরা দিনভর রামনবমী পালনকে ভোটপ্রচারের অঙ্গ বানিয়ে নিয়েছেন। অনেকেই মনে করেন, অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন বিজেপির কাছে ভোটের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠবে। ভোটপ্রচারে দেখা গিয়েছে, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে রামমন্দির নির্মাণকেও মোদী সরকারের ‘কৃতিত্ব’ বলে দাবি করা হচ্ছে।
অযোধ্যায় বুধবার পালিত হচ্ছে রামচন্দ্রের সূর্যতিলক উৎসব। তার সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়েছে। বুধবার মোদীর প্রচার ছিল অসমের নলবাড়িতে। একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে বিমানে বসে অযোধ্যার অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখছেন মোদী। তত ক্ষণে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রামনবমী পালনে পথে নেমে পড়েছেন। প্রতিটি লোকসভা আসনেই বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে সারা দিন ধরে। প্রার্থীরা যে একটির পর একটি কর্মসূচিতে যোগদান করবেন, তা মঙ্গলবার রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
রামনবমী পালনের ক্ষেত্রে বিজেপি নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে ‘উৎসাহী’ ছিলেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এ বার প্রার্থী হয়েছেন বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে। রামনবমী পর্যন্ত অপেক্ষা না করে মঙ্গলবার, অষ্টমী থেকেই তিনি পথে নেমে পড়েন। দিলীপ বলেন, ‘‘রাম ভারতের আত্মা। তাঁর আরাধনা প্রতিদিনের। তবে রামনবমী উৎসব পালনের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আমি যে হেতু এক দিনে সব জায়গায় যেতে পারব না, তাই দু-তিন দিনে ভাগ করে নিয়েছি।’’
এ বছর রামনবমীর দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে নবান্ন। সেই সূত্রেই বিজেপি সতর্ক, এর ফলে রামনবমীর ‘রাজনৈতিক সুবিধা’ যাতে ভাগ হয়ে না যায়। তবে বিজেপি রাজ্যের কোথাওই দলের নামে কোনও কর্মসূচি করছে না। তারা বিষয়টি পরিচালনা করছে পিছন থেকে। প্রকাশ্যে সর্বত্রই কোনও না কোনও স্থানীয় ধর্মীয় সংগঠন বা ক্লাবের নাম রয়েছে। বলা হচ্ছে হিন্দু হিসাবে, রাষ্ট্রপ্রেমী হিসাবে বিজেপি নেতারা যোগ দিচ্ছেন। সেই সুর শোনা গিয়েছে দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘রামই ভারত আর ভারতই রাম। তাই ভারতীয় মানেই তিনি রামের ভক্ত। আমাদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। কারণ, আমরা রামকে নিয়ে রাজনীতি করি না। তবে যেখানে যেখানে উৎসব, সেখানে সেখানে আমাদের উপস্থিতি রয়েছে।’’
প্রত্যাশিত ভাবেই এ নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রামকে ভগবান হিসাবে মোটেই দেখে না বিজেপি। পারলে ভোটের তারকা প্রচারকের তালিকায় নাম দিয়ে দিত! উন্নয়নের রাজনীতি করে না বলে রামনাম নিতে চায়।’’ যার পাল্টা শমীক বলেন, ‘‘কালীঘাটের কালী আর ফাইল নিচ্ছেন না। দিঘায় মন্দির বানাবেন বললেও প্রভু জগন্নাথ আর দেখছেন না। তাই তো রামনবমীতে ছুটি দিয়ে রামের শরণ নিতে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু সেটা হবে না।’’ কুণালও থামেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘সকল ধর্মের অনুষ্ঠানেই রাজ্যে ছুটি থাকে। রাম কি বিজেপির কপিরাইট নেওয়া সম্পত্তি নাকি! রামভক্ত মানেই বিজেপি নয়।’’