ডন ব্র্যাডম্যান, সুনীল গাওস্কর, সচিন তেন্ডুলকর, ব্রায়ান লারা থেকে রিকি পন্টিং। প্রত্যেকেই বিশ্বক্রিকেটের সেরা ব্যাটারদের তালিকায় আসবেন। ভাল ব্যাটার হওয়ার পাশাপাশি এঁদের প্রত্যেকের একটা মিল রয়েছে। দেহের উচ্চতায়। কেউই খুব লম্বা নন। কারও দৈহিক উচ্চতাই ৬ ফুট পৌঁছোয়নি। রাহুল দ্রাবিড়ের মতে, খাটো উচ্চতার ক্রিকেটারেরাই বেশি সাফল্য পান। তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন কোচ। তিনি এই দলে বিরাট কোহলিকেও রেখেছেন। সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, খাটো উচ্চতার ক্রিকেটার বলায় কোহলি হয়তো তাঁর উপর রাগ করবেন।
আশিস কৌশিকের ‘হাল চাল ওউর সওয়াল’ পডকাস্টে এ কথা বলেছেন দ্রাবিড়। তিনি বলেন, “গাওস্করের শরীরের ভারসাম্য দেখুন। যখন ব্যাট করতেন, মনে হত আউট করা যাবে না। আমি ওঁর থেকে একটু লম্বা, তাই চেষ্টা করেও ওঁর মতো ভারসাম্য রাখতে পারতাম না। সচিনও গাওস্করের মতোই। খাটো উচ্চতার ক্রিকেটারদের সুবিধা হয়। কারণ, সেন্টার অফ গ্র্যাভিটির কারণে ওদের শরীরের ভারসাম্য রাখতে সুবিধা হয়। ক্রিকেটে খাটো উচ্চতার ব্যাটারেরাই সফল।”
তাঁর দেখা বেশ কয়েক জন ক্রিকেটারের উদাহরণ টেনেছেন দ্রাবিড়। সেই তালিকায় রয়েছেন কোহলিও। দ্রাবিড় বলেন, “বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটারদের অনেকেই খাটো উচ্চতার। ব্র্যাডম্যান, গাওস্কর, সচিন, লারা, পন্টিং…তালিকা লম্বা। কোহলিও খাটো উচ্চতার। ও হয়তো আমার কথা শুনে রাগ করবে। কিন্তু সেটাই সত্যি।”
উল্লেখ্য দ্রাবিড় যে ক্রিকেটারদের নাম করেছেন তাঁদের মধ্যে সচিন ও গাওস্করের উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। ব্র্যাডম্যানের উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। সেই তুলনায় লারা (৫ ফুট ৮ ইঞ্চি), কোহলি (৫ ফুট ৯ ইঞ্চি) ও পন্টিংয়ের (৫ ফুট ৯ ইঞ্চি) উচ্চতা কিছুটা বেশি। তাঁদের থেকে দ্রাবিড়ের উচ্চতা (৫ ফুট ১১ ইঞ্চি) অবশ্য খুব বেশি নয়।
পডকাস্টে নিজের ফিটনেস, খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে পছন্দের ডাকনাম নিয়েও মুখ খুলেছেন ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী কোচ।
ডাকনাম কেন জ্যামি?
দ্রাবিড় জানিয়েছেন, তাঁর তিনটি ডাকনাম রয়েছে। জ্যামি, ওয়াল ও মিস্টার ব্লুম। তার মধ্যে জ্যামিই তাঁর পছন্দের ডাকনাম। কেন এই ডাকনাম হল তাঁর? দ্রাবিড় বলেন, “আমার বাবা কিষাণ প্রোডাক্ট লিমিটেডে কাজ করত। ওখানে জ্যাম, জেলি এ সব বানানো হত। ছোটবেলায় সকলে জিজ্ঞাসা করত, বাবা কী করে? আমার জবাব শুনে ওরা বলত, ‘ও তোর বাবা জ্যাম বানায়।’ সেখান থেকেই আমাকে সকলে জ্যামি বলে ডাকতে শুরু করে।” ভারতীয় দলে কে তাঁর এই ডাকনাম চালু করেছিলেন? ঠিক মনে করতে পারছেন না দ্রাবিড়। তবে তাঁর মনে হয়, জভগল শ্রীনাথ তাঁকে প্রথমে এই নামে ডাকা শুরু করেন।
তাঁর নাম ওয়াল কী ভাবে হল তা জানেন না দ্রাবিড়। তাঁর মনে হয়, মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য হয়তো সেই নাম হয়েছে তাঁর। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেন, “হয়তো খুব মন্থর ব্যাট করতাম বলে কেউ ওই নাম দিয়েছিল।” তবে এই তিনটির কোনওটিই নয়, দ্রাবিড়ের পছন্দের নাম রাহুল। তিনি চান, তাঁকে সকলে রাহুল বলে ডাকুক।
কী করে স্লিপ ফিল্ডার হলেন?
টেস্ট কেরিয়ারে ২১০টা ক্যাচ ধরেছেন দ্রাবিড়। টেস্টের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় সর্বাধিক ক্যাচ ধরেছেন। এই সব ক্যাচের অধিকাংশই স্লিপে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ধরেছেন। দ্রাবিড় জানিয়েছেন, ভারতীয় দলে ঢোকার পর নয়, তার আগে থেকেই তিনি স্লিপ ফিল্ডার হিসাবে নাম করেছিলেন। দ্রাবিড় বলেন, “কর্নাটকের হয়ে রঞ্জি খেলার সময় থেকেই স্লিপে ফিল্ডিং শুরু করি। আমি তো বল করতাম না। ফলে আমার উইকেট নেওয়ার সুযোগ ছিল না। স্লিপে ফিল্ডিং করলে অনেক বেশি ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ থাকে। খেলার মধ্যে যুক্ত থাকার সুযোগ বেশি। পাশাপাশি বোলারের সাফল্যে আমারও কিছু কৃতিত্ব থাকে। তাই শুরু থেকেই স্লিপে ফিল্ডিং করতে ভাল লাগত।”
কী খেতে ভালবাসেন?
দ্রাবিড়ের সাফ জবাব, বাড়ির সাধারণ খাবার। কেন বাড়ির খাবার পছন্দ তা-ও জানিয়েছেন দ্রাবিড়। তিনি বলেন, “ছোট থেকেই এত বাইরে বাইরে ঘুরতে হয়েছে যে প্রায় সব দেশের সব খাবার খাওয়া হয়ে গিয়েছে। এত বাইরে ঘুরেছি যে বাড়ির খাবার খাওয়াই হয়নি। তাই বাড়ির খাবারের জন্য মুখিয়ে থাকতাম। বাড়ির সাধারণ খাবারই আমার সবচেয়ে পছন্দের।” দ্রাবিড় জানিয়েছেন, তিনি মিষ্টির ভক্ত। তবে তার চেয়েও বেশি ভক্ত আইসক্রিমের। ভ্যানিলা উইথ হট চকোলেট খেতে খুব ভালবাসেন। এই সব খেয়ে খেলতে অবশ্য তাঁর কোনও দিনই সমস্যা হয়নি। দ্রাবিড় জানিয়েছেন, তিনি ট্রেনিংয়ে খুব পরিশ্রম করতেন। ফলে যা ক্যালোরি জমত, তা ঝরে যেত।
অভিনয় কেমন লাগে?
ক্রিকেট ছাড়ার পর বেশি কয়েকটি বিজ্ঞাপন করেছেন দ্রাবিড়। সেগুলি জনপ্রিয় হয়েছে। তিনি অভিনয় জগতে ঢুকবেন কি না সেই জল্পনাও শুরু হয়েছিল। তবে নিজেকে অভিনেতা ভাবেন না দ্রাবিড়। তিনি বলেন, “আমি অভিনয় কোথায় করলাম? কয়েকটা বিজ্ঞাপন করেছি। সেগুলো জনপ্রিয় হয়েছে। দিল্লির গলিতে ক্রিকেট খেলে নিজেকে ক্রিকেটার বলা, আর আমাকে অভিনেতা বলা এক।”
ফিটনেস-রহস্য
খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরেও ফিটনেসের সঙ্গে আপস করেননি দ্রাবিড়। তাঁকে দেখে বোঝা যায়, শরীরের দিকে যথেষ্ট নজর দেন। দ্রাবিড় বলেন, “যখন খেলতাম তখন খেলার জন্য নিজেকে ফিট রাখতে হত। এখন তো আর খেলি না। তবে নিজেকে ফিট রাখি সুস্থ থাকার জন্য।” কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সেরা প্রশিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে দ্রাবিড়ের। তাতে তাঁর সুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, “যে হেতু এনসিএ, ভারতীয় দল ও আইপিএলে কোচিং করেছি তাই সর্বোচ্চ মানের ট্রেনারদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তার জন্য অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। হয়তো আমি ট্রেনিং করছি, তখন কোনও জুনিয়র ঢুকল। সে ঢুকে বলে, স্যর আপনি করে নিন আমি পরে করব। এতে লজ্জাই পড়ে যাই।”
ভারতীয় ক্রিকেটে ফিটনেসের গুরুত্ব এখন অনেক বেড়েছে। ইয়ো ইয়ো টেস্টের পর ব্রঙ্কো টেস্ট এসেছে। তবে দেশের সার্বিক ফিটনেস নিয়ে চিন্তিত দ্রাবিড়। তিনি বলেন, “সব মিলিয়ে ফিটনেসে ভারত অন্য দেশের থেকে অনেক পিছিয়ে। আমেরিকা অলিম্পিক্সে এত পদক পায় কী করে? ওদের ভিতটাই শক্ত। এখানে সেটা হচ্ছে না। স্কুলে মাঠ নেই। যেখানে মাঠ ছিল সেখানে ক্লাস বাড়ানোর জন্য বাড়ি তৈরি হচ্ছে। ফলে খেলাধুলোর জায়গা থাকছে না।”

