পাখির ধাক্কার জেরেই কি খুলল না বিমানের চাকা? দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় প্রাথমিক তথ্য কী

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ানে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে জেজু এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান। প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, বিমানের ১৮১ যাত্রীর মধ্যে ১৭৯ জনেরই মৃত্যু হয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, পাইলট স্বাভাবিক অবতরণের চেষ্টা করিয়েছিলেন বিমানটিকে। কিন্তু ল্যান্ডিং গিয়ার (বিমানের চাকা) আটকে যেতেই বিপত্তি। সমস্যা বুঝতে পেরেই রানওয়েতে বিমানটিকে ‘বেলি ল্যান্ডিং’ করানোর চেষ্টা করেন পাইলট। তবে গতি বেশি থাকার কারণে সেটি রানওয়ে থেকে ছিটকে বিমানবন্দরের পাঁচিলে ধাক্কা মারতেই আগুন ধরে যায়। ঝলসে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

কাজ়াখস্তানের বিমান দুর্ঘটনার মতোই দক্ষিণ কোরিয়ার ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে পাখির সঙ্গে ধাক্কার তত্ত্ব জোরালো হচ্ছে। বেশ কয়েকটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগার কারণেই বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার বিকল হয়ে গিয়েছিল। ফলে চাকা খোলেনি। শেষমেশ পাইলট ‘বেলি ল্যান্ডিং’ করানোর চেষ্টা করেন।

এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। সে দেশের প্রাক্তন কয়েক জন পাইলট জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের রানওয়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। বিমানটিকে যখন ‘বেলি ল্যান্ডিং’য়ের চেষ্টা করানো হয়, সেই সময় সেটির গতি অনেক বেশি ছিল। তাঁদের মতে, অবতরণের সময় বিমানে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লে সাধারণত বিমানবন্দরের উপরেই চক্কর কাটতে থাকে বিমান। কী ভাবে অবতরণ করানো যায়, ওই সময়ের মধ্যে তা সিদ্ধান্ত নিতে হয় পাইলটকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু করা হয়নি। তবে মনে করা হচ্ছে, একেবারে শেষ মুহূর্তেই ‘বেলি ল্যান্ডিং’ করানোর সিদ্ধান্ত নেন পাইলট। প্রশ্ন উঠছে, পাইলট যখন ‘বেলি ল্যান্ডিং’ করানোর সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন, আপৎকালীন সেই অবতরণের বার্তা পাওয়ার পরেও কেন রানওয়েতে দমকলের ব্যবস্থা করলেন না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ? এ রকম বেশ কয়েকটি প্রশ্নই উঠে আসছে।

ঘটনাচক্রে, কাজ়াখস্তানে আজ়জারবাইজানের বিমান দুর্ঘটনাতেও পাখির সঙ্গে ধাক্কার তত্ত্ব উঠে এসেছিল প্রথমে। কিন্তু ক্রমে সেই তত্ত্ব রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দিকে মোড় নিয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে জেজু এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা নিয়েও। প্রাথমিক ভাবে পাখির ধাক্কার বিষয়টি উঠে এলেও পরে তা কোন দিকে মোড় নেবে তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। যদিও দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসন জানিয়েছে, ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটির কারণেই কি দুর্ঘটনা, কোথাও কোনও গাফিলতি হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সস্তার বিমান সংস্থা হল জেজু এয়ারলাইন্স। এই দুর্ঘটনার জন্য বিমান সংস্থাটি শোক প্রকাশ করেছে। মৃত যাত্রীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাসও দিয়েছে। অন্য দিকে, বোয়িং সংস্থার তরফেও বিবৃতি জারি করে শোকপ্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, জেজু এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা। সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তাদের তরফে।

গত ২৫ ডিসেম্বর আজ়জারবাইজানের বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়া প্রদেশের গ্রজ়নিতে যাচ্ছিল আজ়ারবাইজার এয়ারলাইন্সের বিমান। কিন্তু কুয়াশার কারণে সেটির গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আকতু বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করে বিমানটি। কিন্তু তার আগেই ভেঙে পড়ে। সেই ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.