ছত্তীসগঢ়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ, মধ্যপ্রদেশে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকে ‘ছেঁটে’ ফেলার পরে এ বার কি বসুন্ধরা রাজের পালা? সোমবার সন্ধ্যা থেকেই বিজেপির অন্দরে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভবিষ্যৎ’ ঘিরে তৈরি হয়েছে জল্পনা।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার মরুরাজ্যের নবনির্বাচিত বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন দলের তিন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক— প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বিনোদ তাওড়ে এবং রাজ্যসভা সাংসদ সরোজ পাণ্ডে।
বিজেপির একটি সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটের পর বসুন্ধরা তাঁর অনুগামী প্রায় দু’ডজন বিজেপি বিধায়ককে নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করায় ‘বিদ্রোহের’ ইঙ্গিত দেখছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। তাই দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথের মতো হেভিওয়েট নেতাকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের নেতা করে পাঠানো হচ্ছে রাজস্থানে।
২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় এ বার বিজেপি ১১৫টিতে জিতে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে ৬৯টি। নির্দল এবং অন্য দলগুলির প্রার্থীরা জিতেছেন ১৫টি আসনে। ওই রাজ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরার পাশাপাশি বিধানসভা ভোটে সদ্যজয়ী তিন সাংসদ মহন্ত বালকনাথ, দিয়া কুমারী এবং রাজ্যবর্ধন রাঠৌরের নাম আলোচনায় রয়েছে বলে দলের একটি সূত্রের খবর। এ ছাড়া বিজেপির প্রাক্তন দুই রাজ্য সভাপতি, ওপি মাথুর ও সতীশ পুনিয়ার নাম রয়েছে জল্পনার তালিকায়। তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী— গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, অশ্বিনী বৈষ্ণব, অর্জুনরাম মেঘওয়ালের পাশাপাশি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার নাম ঘিরেও চলছে জল্পনা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী পদে আদিবাসী নেতা বিষ্ণুদেও সাই এবং মধ্যপ্রদেশে অনগ্রসর (ওবিসি) নেতা মোহন যাদবের পরে এ বার জাতপাতের সমীকরণ মাথায় রেখে রাজস্থানে কোনও ‘উচ্চবর্ণের’ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী বাছতে পারেন বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে দলের দীর্ঘদিনের ‘ভোটব্যাঙ্ক’ রাজপুতেরা। বসুন্ধরা রাজপুত কন্যা হলেও ঢোলপুরের জাঠ রাজবংশের ঘরণী। অন্য দিকে, দীয়া রাজপুত রাজবংশের সন্তান। বালকনাথ ওবিসি জনগোষ্ঠীর নেতা।
দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা এ বার তাঁর পুরনো কেন্দ্র ঝালারাপাটনে জিতলেও নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের ‘সুনজরে’ না থাকায় তাঁর পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া কঠিন বলে দলের একটি অংশ মনে করছে। এই পরিস্থিতিতে ঢোলপুরের মহারানির ‘রণকৌশল’ নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। সেই জল্পনা উস্কে গত সোমবার জয়পুরের নিজের সরকারি নিবাস ১৩ নম্বর সিভিল লাইন্সে বিজেপির ২০ জন বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন বসুন্ধরা।
সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে গোপীচাঁদ মীনা, শঙ্কর সিংহ রাওয়তের মতো হেভিওয়েট বিজেপি বিধায়কেরা হাজির ছিলেন। বৈঠকে হাজির দুই প্রভাবশালী সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক বাহাদুর সিংহ এবং সুরেশ রাওয়ত প্রস্তাব দেন, বসুন্ধরাকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে তাঁরা বিজেপি শীর্ষনেতৃত্বের দ্বারস্থ হবেন। সেই প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়। বসুন্ধরার ওই পদক্ষেপকে ‘বিদ্রোহের সূচনা’ বলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ চিহ্নিত করেছিলেন।