বর্ষবরণ না দীপাবলির রাত বোঝা দায়। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁতেই শুরু হল নতুন বছরের উদ্যাপন। সঙ্গে শব্দবাজির তাণ্ডব। যা হার মানাল দীপাবলিকেও। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, শহর থেকে শহরতলি, শব্দবাজির দাপট! বাদ গেল না হাসপাতাল চত্বরও। সৌজন্য, বর্ষবরণের রাত।
নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নেওয়াই ছিল। নাইট ক্লাব-পাবগুলিতে ছিল গানবাজনা, খানাপিনার আসর। পাড়ায় পাড়ায় মঞ্চ বেঁধে ছিল ডিজে-র তারস্বরে গান। এ সবের সঙ্গেই জুড়ে গেল শব্দবাজি। গত দু’বছর করোনাবিধি জারি থাকায় উপদ্রব ছিল কিছুটা কম। এ বছর তা ছাপিয়ে গেল সব কিছুকে। পাটুলি, কসবা, বিরাটি এ সব এলাকায় শব্দের দাপটি ছিল সবচেয়ে বেশি। গড়ে ৭০ ডেসিবলের উপরে। পাটুলিতে শব্দের তীব্রতা ছিল ৮১.৫ ডেসিবল। বাগবাজার ৬৯, সল্টলেকে ৬৮.৩, টালিগঞ্জে ৬৬ এবং নিউ মার্কেট এলাকায় শব্দের তীব্রতা ছিল ৬৪.৪ ডেসিবল। শহরের যে কোনও হাসপাতাল চত্বরে শব্দের মাত্রা রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা অবধি ৪০ ডেসিবলের বেশি হওয়ার কথাই নয়। সেখানে আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে তীব্রতা ছিল ৬১.৫। তুলনায় এসএসকেমের সামনে শব্দের তীব্রতা ছিল কম। সেখানে শব্দের তীব্রতা ছিল ৪৫.১ ডেসিবল।
আতসবাজি এবং শব্দবাজি পোড়ানো শুরু হতেই কলকাতায় খারাপ হল বায়ুর মান। রাত ১২টার পর বায়ুসূচকের মান ছিল যথাক্রমে, ফোর্ট উইলিয়ামে ১৭১ (সহনীয়), রবীন্দ্র সরোবরে ২২৫ (খারাপ), বালিগঞ্জে ২৮৫ (খারাপ), যাদবপুরে ২৭৪ (খারাপ), রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২০ (খুব খারাপ), ভিক্টোরিয়া চত্বরে ৩১৫ (খুব খারাপ) এবং বিধাননগরে ৩৩১ (খুব খারাপ)।
প্রতি বছরই শীতের মরসুমে পিকনিক, উৎসব লেগে থাকে। সেই সমস্ত জায়গায় উদ্দাম ভাবে ডিজে চালানো হয়। শব্দবিধি না মেনে বাজানো হয় মাইক। নববর্ষে শব্দদূষণ রুখতে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি)-কে চিঠি দিয়েছিলেন পরিবেশকর্মীরা। ডিজে-র উপদ্রব ও জোরে মাইক বাজানো নিয়ন্ত্রণের জন্য আবেদনও জানানো হয়েছিল ওই চিঠিতে। কিন্তু তাতে কাজ হয়েছে বলে মনে হল না।
৩১ তারিখ রাতে যে পরিমাণ বাজি ফাটল, তেমনটা ফাটে কালীপুজোয়। শব্দবাজিতে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এত বাজি ফাটল কী ভাবে তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা।