মৃতপ্রায় গন্ধেশ্বরী নদীর বুকেই জমা করা হয়েছে পাহাড়প্রমাণ বালি। সেখান থেকেই বালি সরবরাহ করা হচ্ছে ঠিকাদারদের। পুরসভার মদতেই চলছে এই বিপুল বালির কারবার। মজে যাচ্ছে নদী। পদক্ষেপের দাবিতে মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠন।
নদীর পাড়ে অথবা নদীবক্ষে বালি মজুত করা নিয়ে বারেবারে সরব হতে দেখা গিয়েছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিকে। কিন্তু এবার খোদ পুরসভার মদতেই নদীবক্ষে পাহাড়প্রমাণ বালি মজুত করার অভিযোগ উঠল বাঁকুড়ায়। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে বাঁকুড়া শহরে। এ নিয়ে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি দ্বারস্থ হয়েছে মহকুমা শাসকের।
বাঁকুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে গন্ধেশ্বরী নদী। এই নদী একসময় ছিল বাঁকুড়া শহরের প্রাণভোমরা। এই নদী থেকে তোলা জলেই পানীয় জলের চাহিদা মিটত শহরবাসীর। প্রশাসনের টালবাহানায় সেই গন্ধেশ্বরী নদী আজ মজে গিয়ে পরিণত হয়েছে এক নালায়। তবে বর্ষা এলে নদী ফিরে পায় নিজের চেহারা। তখন দুকূল ছাপিয়ে বইতে থাকে জল। পুরসভার আবর্জনায় নদীগর্ভ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষার বাড়তি জল পাড় ডিঙিয়ে ভাসিয়ে দেয় দুপাশ। বন্যায় ভাসে বাঁকুড়া শহরের সতীঘাট-সহ একাংশ।
সেই মরা গন্ধেশ্বরী নদীর উপর এবার নেমে এল খাঁড়ার ঘা। শহর-লাগোয়া নদীর বুকে জমা করা হয়েছে বালির পাহাড়। কয়েকশো ডাম্পার অন্য এলাকা থেকে নিয়ে এসে জমা করা হয়েছে নদীর ধারে। পুরসভাসূত্রে খবর, বাঁকুড়া শহরে ‘হাউস ফর অল’-সহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ যাতে বালির অভাবে বন্ধ না হয়ে যায়, সেজন্যই পুরসভার মদতেই ওই বিপুল পরিমাণ বালি ডাঁই করে রেখেছেন একশ্রেণীর ঠিকাদার। অভিযোগ, শুধুমাত্র সরকারি প্রকল্পে নয়, এই বালি অবৈধ ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে শহরের বাসিন্দাদেরও। আর এখানেই পুরসভার ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
প্রশ্ন অনেক। প্রথম প্রশ্ন হল– বরাত পাওয়া ঠিকা সংস্থাকে বালি সরবরাহ করার জন্য পুরসভার মদতে কি এভাবে বালি মজুত করা যায়? আর যদি বালি মজুত করা হয়েই থাকে তাহলে তা কী ভাবে বিনা চালানে সরবরাহ করা হচ্ছে? মজুত বালি শুধু সরকারি প্রকল্পে ব্যবহার না করে কী করে তা বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে? নদীর বুকে এভাবে বালি মজুত করা বেআইনি। তাহলে কীভাবে তা করা হল? বাঁকুড়া শহর জেলার সদর শহর। প্রশাসনের সমস্ত দফতর এখানে রয়েছে। তা হলে প্রশাসনের সেই নাকের ডগায় কীভাবে এই ধরনের কাজ সম্ভব?
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া সদরের মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চ। আন্দোলনের ডাক দিয়েছে গন্ধেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটি-সহ একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠন। তাঁদের দাবি, এর ফলে গন্ধেশ্বরী নদীর পথ আরও রুদ্ধ হয়ে গিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়বে নদী। বাড়বে বন্যার আশঙ্কাও।