হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে শুরু সংখ্য়ালঘু হিন্দুদের উপর নানা আক্রমণের কথা উঠে আসছে খবরের শিরোনামে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরেই বাংলাদেশের হাল ধরেছেন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুস। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনা ক্রমবর্ধমান। এবার এল নয়া অভিযোগ। বাংলাদেশে চাকরি হারাচ্ছে সংখ্যালঘুরা। এরই মাঝে আট দফা দাবিতে চট্টগ্রামে গণসমাবেশ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ শেষে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা করা হয়।
শোনা যাচ্ছে, নানা কর্মক্ষেত্রে হিন্দুদের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে যে তাঁরা নাকি ভালোবাসার ফাঁদ পাতছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু শিক্ষক ও অধ্যপকদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়। পদত্যাগ না করলে খুনের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। তবে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, পুলিস থেকেও বরখাস্ত করা হচ্ছে। সম্প্রতি ২৫২ জন পুলিশকর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে, এদের মধ্যে ৯১ জন হিন্দু। এরা সবাই নিয়োগ হয়েছেন শেখ হাসিনার আমলে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ইতিহাসের অধ্যাপক রন্টু দাসের ইস্তফাপত্র এখন ভাইরাল। তাঁকে খুনের হুমকি মুখে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন তিনি।
একদিকে হিন্দুরা যখন তাঁদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ধরছেন অন্যদিকে তখন বাংলাদেশের একাধিক মৌলবাদী সংগঠন হিন্দুদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ আনছে। ভারতে যেভাবে ‘লাভ জিহাদ’ করা হয় বলে অভিযোগ, সেভাবে বাংলাদেশের হিন্দুদের একাংশ মুসলিম মেয়েদের ভালোবেসে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ মৌলবাদী সংগঠনের তরফে। এমন পরিস্থিতিতেই লংমার্চের ডাক দিচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তিনি বলেন, ‘সনাতনীদের এ দেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ছয় দফা দাবি উঠেছিল, সেই মাঠে বাংলাদেশের সব মঠ–মিশনের সাধুরা সমবেত হয়েছেন সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতই নিপীড়ন হবে, আমরা তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। দাবি আদায়ে বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ শেষে আমরা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করব।’
প্রধান বক্তা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী আরও বলেন, ‘কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হচ্ছে বারবার, এ দেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। কারণ, সহনশীলতা লুপ্ত হচ্ছে। সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনায় জড়িত থাকেন, তাঁদের আসামি করুন, বিরোধিতা করব না। কিন্তু বেছে বেছে মামলায় আসামি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল চারটি মূলনীতিতে। আমাদের দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়। হিন্দুদের অস্তিত্বের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা গণতন্ত্রের নামে প্রহসনকে মেনে নেব না। আমরা সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে আসন চাই।’