সিমলিপালে বাঘিনি জ়িনত, ন’দিনের বাংলা ‘সফর’ সেরে বছরের প্রথম দিনে ঘরের মেয়ে ফিরল ঘরে

নতুন বছরের প্রথম দিনে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরল।

বাংলা ‘সফর’ শেষে এখন বাঘিনি জ়িনত আবার নিজের ডেরায়। মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে জ়িনতকে গ্রিন করিডোর করে ওড়িশার সিমলিপালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে নিজের ঠিকানায় ফিরলেও রাতে বাঘিনিকে জঙ্গলে ছাড়া হয়নি। রাখা হয় পর্যবেক্ষণে। এর পর বুধবার দুপুরে ওড়িশার সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভে বাঘিনির পুরনো ডেরায় ছাড়া হয়। জানা গিয়েছে, সে সুস্থ আছে।

বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহিতে জ়িনতকে ধরার পরে রবিবার রাতে আলিপুরে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেখানকার পশু হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল তাকে। সোমবার দিনভর জ়িনতকে ওআরএস দেওয়া হয়। এর পর মঙ্গলবার দুপুরে তিন রকম মাংস খেতে দেওয়া হয়েছিল— মহিষ, ছাগল এবং মুরগির মাংস। কিন্তু তিন ধরনের মাংসের কোনওটাই ছুঁয়ে দেখেনি সে। সোম ও মঙ্গলবার শুধু ওআরএস আর জল মুখে দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘিনির প্রায় ৪৮ ঘণ্টা না খাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু ছিল না। বাঘ প্রতিদিন খাবার খাবে এর কোনও মানে নেই। টানা সাত দিন না খেয়েও থাকতে পারে তারা।

ন’দিন ধরে বনকর্মীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছে জ়িনত। দাপিয়ে বেড়িয়েছে বাংলার তিন জেলা। তাকে ধরতে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হয় বনকর্মীদের। অবশেষে রবিবার দুপুর ৩টে ৫৮ মিনিট নাগাদ বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহির জঙ্গলে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয় ওড়িশার বাঘিনি। তার পর তাকে খাঁচাবন্দি করেন বনকর্মীরা।

মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র সংরক্ষণে জন্ম জ়িনতের। তার পর সেখান থেকেই তাকে পাঠানো হয় ওড়িশার সিমলিপালে। সেখানকারই বাসিন্দা সে। কিন্তু দিন কয়েক আগে ঝাড়খণ্ডের কুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকা হয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার কাটচুয়া জঙ্গলে প্রবেশ করেছিল বাঘিনি। তার পর দু’দিন ধরে কখনও ময়ূরঝর্নার জঙ্গলে, আবার কখনও কাকড়াঝোড়ের জঙ্গলে নিজের ঠিকানা বদল করছিল। পরে তেলিঘানার জঙ্গল হয়ে জ়িনত প্রবেশ করে পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান থানা এলাকার রাইকা পাহাড়ে। রাইকা পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী ভাঁড়ারি পাহাড়ে দিন চারেক কাটিয়ে মানবাজারের ডাঙ্গরডিহির জঙ্গলে হাজির হয় সে। সেখান থেকেই শুক্রবার ভোরের দিকে জ়িনত কুমারী নদী পেরিয়ে ঢুকে পড়ে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের গোঁসাইডিহির জঙ্গলে। রবিবার সেই জঙ্গল থেকেই ধরা হয় জ়িনতকে। বাঘিনিকে ওড়িশার সিমলিপাল থেকে আনা বিশেষ খাঁচায় বন্দি করে ফেলে বন দফতর। বিষ্ণুপুর বন বিভাগের দফতরে নিয়ে গিয়ে বাঘিনির একদফা শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। সেখান থেকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। রাখা হয় পর্যবেক্ষণে। মঙ্গলবার রাতে গ্রিন করিডোরে করে সিমলিপালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সে তার ডেরায় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.