‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু আছে, তা-ও ত্রিপুরায় শুরু পৃথক স্বাস্থ্যবিমা, পথ দেখাচ্ছেন মমতাই, বললেন চন্দ্রিমা

কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু রয়েছে বিজেপি-শাসিত ত্রিপুরায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার পৃথক ভাবে স্বাস্থ্যবিমা চালু করল। বুধবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ‘চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা’ প্রকল্পের সূচনা করেছেন। যে প্রকল্পে প্রতিটি পরিবার বছরে পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাবেন। যে পরিবারগুলি ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর আওতায় নেই, তাদের এই সুবিধা দেবে ত্রিপুরা সরকার। প্রকল্পটি চালু করার জন্য ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে। ত্রিপুরা সরকারের ওই নতুন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। বাংলার শাসকদলের বক্তব্য, কেন্দ্রের এমনই প্রকল্প, যে রাজ্য সরকারকে নতুন করে সেটা আবার শুরু করতে হচ্ছে!

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক বলেছেন, ‘‘চার লক্ষের বেশি পরিবার আয়ুষ্মানের আওতায় নেই। তাঁদের স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ দেওয়ার জন্যই এই প্রকল্প চালু করা হল।’’ মানিক নিজে পেশায় চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘‘যত মানুষ আমার কাছে তাঁদের সমস্যা নিয়ে আসেন, বেশিরভাগটাই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত।’’ মানিক এ-ও জানিয়েছেন, ত্রিপুরার পাঁচ লক্ষের বেশি পরিবার আয়ুষ্মানের আওতায় রয়েছে। বাকি যাঁরা ছিলেন, তাঁদের রাজ্যের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

‘আয়ুষ্মান ভারত’ শুরু হলেও বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওই প্রকল্প গ্রহণ করেনি। বাংলায় ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প চালু করেছেন মমতা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, ‘‘আয়ুষ্মানে ৪০ শতাংশ টাকা রাজ্যগুলিকে দিতে হয়। তার পর ওদের ছবি লাগিয়ে প্রচার হয়। সেই প্রকল্প আমরা কেন নেব? আমরাই ১০০ শতাংশ টাকা দিয়ে আমাদেরটা করে নেব।’’ মমতা আরও বলে থাকেন, ‘‘আয়ুষ্মান ভারতে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে অনেক ঝামেলা রয়েছে। যাঁদের বাড়িতে টিভি-ফ্রিজ রয়েছে, তাঁদের সুযোগ দেওয়া হয় না। আমরা স্বাস্থ্যসাথীতে সকলকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। কোনও বৈষম্য রাখিনি।’’

ত্রিপুরা বিজেপিরও অনেক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর নানাবিধ মাপকাঠির কারণেই চার লক্ষের বেশি পরিবারকে ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী মানিক বুধবারের অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘দিল্লি থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে।’’

বাংলার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীতে দিদি (মমতা) দু’টি বিষয় করেছেন। এক, বাড়ির মহিলাদের নামে কার্ড। দুই, সকলের জন্য বিমা। কোনও বাছবিচার করা হয়নি।’’ ত্রিপুরার নতুন প্রকল্প নিয়ে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা আয়ুষ্মান গ্রহণ করিনি। এখন দিদির দেখানো পথকেই ত্রিপুরায় গ্রহণ করতে হচ্ছে।’’ ত্রিপুরা বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, ‘‘আয়ুষ্মান চালু হয়েছে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য। তার পরেও যাঁরা বাকি থাকছেন, তাঁদের জন্য রাজ্য সরকারের প্রকল্প শুরু হল। এই দুইয়ের মধ্যে কোনও সংঘাত নেই।’’ যার পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য, এ ভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার ‘বোকা’ বানাচ্ছে রাজ্যগুলিকে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.