ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন কোথায়? এই প্রশ্ন নিয়ে গত তিন দিনে দেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। তবে অবশেষে তাঁর দেখা মিলেছে। ৩০ ঘণ্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পরে রাঁচীতে নিজের বাড়ির সামনে দেখা গিয়েছে হেমন্তকে। ঝা়ড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পিছন পিছন তাঁর বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে ইডি-ও।
জমি জালিয়াতি মামলায় প্রশ্ন করার জন্য গত কয়েক দিন ধরেই ঝা়ড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে খুঁজছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি। কিন্তু কোথায় ছিলেন হেমন্ত? কী ভাবেই বা ইডির ‘চোখে ধুলো’ দিয়ে দিল্লি থেকে রাঁচী পৌঁছলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী? রবিবার শেষ বার দিল্লির বিমানবন্দরে নামতে দেখা গিয়েছিল হেমন্তকে। দিল্লিতে হেমন্তের যে বাড়ি রয়েছে, তা শান্তিনিকেতন এলাকায়। সোমবার সেই বাড়িতে অভিযান চালান ইডির তদন্তকারী আধিকারিকেরা। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে দু’টি বিএমডব্লিউ গাড়ি পায় ইডি। বাজেয়াপ্ত করা হয় ৩৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু খোঁজ মেলেনি হেমন্তের। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-র প্রধান যে ব্যক্তিগত বিমানে করে দিল্লি এসেছিলেন, সেটিও পুরো সময় জুড়ে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই দাঁড় করানো ছিল। তা হলে কী ভাবে দিল্লি থেকে রাঁচী পৌঁছলেন হেমন্ত?
দিল্লি থেকে রাঁচীর দূরত্ব প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার। মনে করা হচ্ছে, দিল্লি থেকে একটি গাড়ি করেই সেই দূরত্ব পাড়ি দেন হেমন্ত। সূত্রের খবর, ‘অতি কৌশলে’ সংবাদমাধ্যম এবং রাস্তার টোলপ্লাজার ক্যামেরায় ধরা না দিয়ে রাঁচী পৌঁছন তিনি। তত ক্ষণে তাঁর নামে ‘নিখোঁজ’ পোস্টার ফেলেছে বিজেপি। তাতে এ-ও বলা হয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর খবর দিলে ১১ হাজার টাকা ইনাম দেওয়া হবে। স্বাভাবিক ভাবেই হেমন্তকে রাঁচীতে দেখার পরে তাঁকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তিনি কোথায় ছিলেন? এর জবাবে ঝড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি তো আপনাদের হৃদয়েই থাকি।’’ যদিও তিনি সড়কপথে দিল্লি থেকে রাঁচী পৌঁছেছেন কি না, সে বিষয়ে হেমন্ত বা তাঁর দলের কেউ মুখ খোলেননি।
জেএমএম-এর দাবি, ‘ব্যক্তিগত কাজে’ দিল্লি গিয়েছিলেন হেমন্ত এবং সেই কাজ মিটিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন। পাশাপাশি হেমন্তের অনুপস্থিতিতে তাঁর বাড়ি তল্লাশি করার ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ বলেও মন্তব্য করেছে জেএমএম। রাঁচী পৌঁছে নিজের বাড়িতে দলের বিধায়কদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন হেমন্ত। উল্লেখযোগ্য যে, সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেমন্ত-জায়া কল্পনা সোরেনও। ইডির জিজ্ঞাসাবাদের আগে শাসক জোটের বিধায়কদের বৈঠক এবং তাতে কল্পনার উপস্থিতি আলোচনায় রসদও জুগিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের রাঁচীর বাড়িতে পৌঁছয় ইডির দল। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী ডেকে পাঠানো হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার সময় এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরির আশঙ্কা করছে তারা। সে জন্যই আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইছেন তদন্তকারীরা।