করোনার দাপটে ভয়ে সিঁটিয়ে গোটা বিশ্ব। করোনা আবহে মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ভেষজ উদ্ভিদ কত’টা জরুরী। করোনার মত মারণ রোগ প্রতিরোধে অর্শ্বগন্ধা, গুলঞ্চ, যষ্টিমধুর মতো ভেষজ উদ্ভিদের কদর বাড়ছে। আর ওই সব নানান ভেষজ উদ্ভিদের উদ্যান তৈরী করেছে গলসী-১ ব্লকের কৃষকবাজার। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় তৈরী ভেষজ উদ্ভিদের উদ্যানে গাছের পরিচর্যা চলছে জোরকদমে।
বুদবুদ মানকর রোডে কৃষকবাজার। ওই কৃষকবাজারের ফাঁকা জমিতে গতবছর লেমন গ্রাস ঘাসের বাগান তৈরী হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ঘাস বড় হয়েছে। চলছে পুনঃস্থাপনের কাজও। এবার কৃষকবাজারের ফাঁকা জমিতে ভেষজ উদ্যান তৈরী করে নজির গড়ল গলসী-১ নং পঞ্চায়েত সমিতি। আর ওই বাগান তৈরীতে সক্রিয় ভুমিকা নিয়েছেন খোদ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অনুপ চট্টোপাধ্যায়।
কি রয়েছে ওই বাগানে? প্রায় দু- বিঘা জমির একটা অংশে লাগানো হয়েছে ভেষজ গাছের চারা। বাগানে রয়েছে গুলঞ্চ বা গিলয়, যষ্টিমধু, কৃষ্ণ তুলসী, রাধা তুলসী, পিপারমেন্ট, হিং, অর্শ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, ড্রাগন ফ্রুট, পুঁদিনা, কালমেঘ, ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা), রসুন লতা, জোয়ান, শ্বেত চন্দন, রক্ত চন্দন, থানকুনি, কুলেখাঁড়া, শিবের জটা সহ নানান ভেষজগুন সম্পন্ন গাছ।
আর একটা অংশে রয়েছে নানান ফলের বাগান। সেখানে থাইল্যান্ডের আম, কুল, কাঁঠাল। যেগুলোর বছরে একাধিকবার ফলন হয়। রয়েছে ডালিম, রুদ্রাক্ষ, মৌসুম্বি লেবুরও গাছ।
আবার আর একাংশের লাগানো হয়েছে নানান শীতকালীন সব্জি। পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধা কপি, টমেটো, মুলো, লাউ, কুমোড়ো সহ নানান সব্জি গাছ।
বাগানের পরিচর্যায় থাকা গোপাল গুপ্তা জানান, “৪৫ রকমের ভেষজ উদ্ভিদের গাছ লাগানো হয়েছে। ওইসব গাছের জন্য মাটি তৈরী করতে হয়েছে। তারসঙ্গে প্রয়োজন মত জৈব সার, জল দেওয়া হয়। গাছের গোড়ায় কোনওরকম ঘাস থাকতে দেওয়া হয় না।”
করোনা আবহে ভেষজ গাছ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গাছ বড় হয়েছে। তবে করোনার মতো মহামারিতে অর্শ্বগন্ধা, গুলঞ্চ, যষ্টিমধুর মতো গাছের উপকারিতা রয়েছে। তাই চাহিদা রয়েছে। অনেকে গাছের পাতা, শেঁকড় এমনকি চারা গাছও নিতে আসছে।”
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডাঃ প্রদীপকুমার শেঠ বলেন, “করোনার মত রোগ প্রতিরোধে অর্শ্বগন্ধার যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়। বার্ধ্যক জনিত রোগ প্রতিরোধ করে। মানবদেহের শরীরের কোষ ম্যাচিওর করতে সাহায্য করে। ইনফেকশন রোধ করে। মানসিক চিন্তা ও ক্লান্তি দুর করে। ডায়োবেটিস ও চামড়াজনিত রোগ প্রতিরোধ করে।”
তিনি বলেন, “এই গাছ শুকিয়ে গুঁড়ো করে এক চামচ হালকা দুধ কিম্বা জলের সঙ্গে দুপুর ও রাতে খাবার পর খেতে হয়। তবে গ্যাস অম্বল যাদের হয়, তাদের খাওয়া উচিত নয়।”
গুলঞ্চ লতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ব্লাড সুগার, যেকোনও ধরনের জ্বর, পিত্তজনিত রোগ সারাতে সাহায্য করে। ইউরিক অ্যাসিড কম করতে সাহায্য করে।” তিনি বলেন, “গুলঞ্চ গাছের কান্ড রাতে জলে ভিজিয়ে, পরের দিন সকালে ওই জল সেবন করতে হয়।”
করোনার দাপটে সিটিয়ে যখন গোটা বিশ্ব। তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অর্শ্বগন্ধা, গুলঞ্চের মত ভেষজ উদ্ভিদই একমাত্র ভরসা। সকাল হলেই যেমন লেবু জল কিম্বা তুলসী পাতার জল, আবার কখনও মধু, তুলসী পাতা খেতে হচ্ছে। ভেষজগুন সম্পন্ন ওইসব গাছ সমাজে কতটা জরুরী তা কার্যত টের পাইয়ে দিয়েছে করোনা রোগ।
জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় গলসী-১ নং ব্লকের কৃষকবাজারে ভেষজ উদ্ভিদ উদ্যান তৈরী করা হয়েছে। গলসী-১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অনুপ চট্টোপাধ্যায় জানান,” তুলসী গাছের প্রায় সব অংশ কোনও না কোনও রোগ নিরাময়ে কাজে লাগে। তেমনই থানকুনি পাতা, কুলেখাঁড়া শাক, ড্রাগন ফ্রুট, অর্শ্বগন্ধা, জোয়ানগাছ, প্রত্যেকটি গাছের ভেষজ গুনাগুন রয়েছে। আবার করোনার মত মারণের মোকাবিলায় অর্শ্বগন্ধা, গুলঞ্চ, যষ্টিমধু গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ওইসব গাছ সম্পর্ক পড়ুয়াদের উদ্বুদ্ধ করতে এই ভেষজ বাগান। পড়ুয়ারা এই বাগান পরিদর্শন করে তার গুনাবলি অতি সহজে জানতে পারবে এবং বাড়িতে এইসব গাছ লাগানো তার যত্ন নেওয়া এবং ব্যাবহার করতে পারবে।” তিনি জানান, “প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে এই প্রজেক্ট হয়েছে। এখানকার শাক সব্জি ব্লকের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ী সেন্টারে জেগান দেওয়া হবে। তাতে টাটকা শাকসব্জি থেকে শিশু ও প্রসুতি মায়েরা পুষ্টিকর খাবার পাবে।”