তাঁর কোনও বেনামি সম্পত্তি নেই। গরু পাচার মামলায় গ্রেফতারের পর দ্বিতীয় বার মুখ খুলে এমন দাবি করলেন অনুব্রত মণ্ডল। শনিবার নিজাম প্যালেস (কলকাতায় সিবিআই দফতর, গ্রেফতারের পর যেখানে অনুব্রতকে রাখা হয়েছে) থেকে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতিকে বার করার সময় সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও বেনামি সম্পত্তি নেই।’’
বস্তুত, গরু পাচার-কাণ্ডে অনুব্রত ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৬.৯৭ কোটি টাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, হদিস পাওয়া বিপুল পরিমাণ টাকার অঙ্ক বিভিন্ন জেলার একাধিক ব্যাঙ্কে মূলত স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) হিসাবে রয়েছে।
পাশাপাশি ‘কেষ্ট’-ঘনিষ্ঠের রাইস মিলেও হানা দেয় সিবিআই। বোলপুরের ‘ভোলে ব্যোম রাইস মিল’-এ ঝকঝকে দামি গাড়ির সম্ভার দেখা গিয়েছে। সূত্রের খবর, অনুব্রতের স্ত্রী এবং মেয়ের নামেই রয়েছে এই চালকল। গ্যারেজের গাড়িগুলির মালিকদের নামধামও হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। এই প্রেক্ষাপটে তাঁর কোনও বেনামি সম্পত্তি নেই বলে দাবি করলেন অনুব্রত।
সঙ্গে বললেন, ‘‘ওরা তদন্ত করে দেখুক।’’ অনুব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অনুব্রতের জবাব, ‘‘আমি তদন্তে ১০০ শতাংশ সহযোগিতা করছি।’’
প্রসঙ্গত, রাখিবন্ধনের দিন সকালে বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকায় অনুব্রতের বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হানা দিয়েছিল সিবিআই। তার কিছু সময় পরেই গরু পাচার মামলায় তৃণমূলের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে আটক করা হয়। পরে গ্রেফতার হন অনুব্রত। বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তিনি। কলকাতার নিজাম প্যালেসে রাখা হয় অনুব্রতকে। গ্রেফতার হওয়ার পর কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন তৃণমূলের এই ‘মুখর’ নেতা।
সম্প্রতি অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, টেট (প্রাথমিক শিক্ষক পদে যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা) পাশ না করেই তিনি শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছেন তাঁর বাড়িরই কাছের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুকন্যাকে টেটের শংসাপত্র নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এর পরই আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে অনুব্রতকে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতারের পর তিনি প্রথম বার মুখ খুলে বলেছিলেন যে, তাঁর মেয়ের টেট পাশ করা আছে, শংসাপত্রও রয়েছে। পরে অবশ্য সুকন্যা আদালতে হাজিরা দেন। কিন্তু তাঁকে কাঠগড়ায় উঠতে হয়নি। ওই মামলা প্রত্যাহার করে নেন বিচারপতি। সে দিনের পর এ বার বেনামি সম্পত্তি নিয়ে দ্বিতীয় বার মুখ খুললেন অনুব্রত।