সিউড়ির সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে হানা দিল সিবিআই-এর টিম। বৃহস্পতিবার দুপুরে আচমকাই ওই ব্যাঙ্কে পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, ওই ব্যাঙ্কে এমন অনেকগুলি অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গিয়েছে, যা বেনামে খোলা হয়েছে। প্রায় ১৭৭ টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রথম দিকে সিবিআইকে অসহযোগিতা করছিল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সিবিআইয়ের গ্রেফতারের হুমকিতে সমস্ত নথি সামনে আনে ব্যাঙ্ক।
বৃহস্পতিবার দুপুর ৩.২০ নাগাদ সিবিআইয়ের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিউড়ির বিবেকানন্দ রোডের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে হানা দেয়। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সুশান্ত ভট্টাচার্য। গরু পাচার মামলার তদন্তে নেমেই সিবিআই এদিন কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে হানা দেয়।
সিবিআইয়ের দাবি, তদন্তে নেমে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ব্যাঙ্কে তল্লাশি চলে। প্রাথমিক ভাবে উদ্ধার হয় ১৭৭ টি জাল অ্যাকাউন্ট। সিবিআইয়ের দাবি, প্রতিটি অ্যাকাউন্টে সই একজনেরই। আর সেই ব্যক্তির সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের যোগ থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। এই অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে সিবিআই। ওই সব অ্যাকাউন্টে প্রায় ১০ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গিয়েছে। সেই সম্পর্কিত নথি সংগ্রহ করে ব্যাগে ভরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ রওনা দেয় সিবিআই অফিসাররা।
সূত্রের খবর, ওই অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে রাজ্য খাদ্য দফতরের যোগসূত্র রয়েছে। গরু পাচারের কালো টাকা সাদা করার জন্য খাদ্য দফতরকেও ব্যবহার করা হয়েছে? সেই প্রশ্নই সামনে আসছে। সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, গরিব মানুষদের কাছ থেকে অল্প দামে নগদে ধান কেনা হত ওই সব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। এভাবে গরু পাচারের টাকা দিনের পর দিন সাদা করা হত বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। সে কারণেই তথ্য সংগ্রহ করতে এদিন ব্যাঙ্কে পৌঁছে যায় সিবিআই। খাদ্য দফতরের কাছে চাল বিক্রির বিনিময়ে পাওয়া টাকার চেক এই সমস্ত বেনামে থাকা অ্যাকাউন্টগুলিতে জমা করা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। কার সই রয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেনদেন হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আগেও গরু পাচারের মামলায় একাধিকবার ব্যাঙ্কে গিয়েছে সিবিআই। বোলপুরের যে সব ব্যাঙ্কে অনুব্রত মণ্ডল বা তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট আছে, সেগুলিতে হানা দিয়েছে সিবিআই। আর এবার সিউড়ির ব্যাঙ্কে হাজির হয় গোয়েন্দারা।
উল্লেখ্য, এদিনই ফের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। মূলত ২০২০, ২০২১ সালে সব চেয়ে বেশি অ্যাকাউন্ট হয়েছে বলে খবর। সেই সময় এই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার পদে ছিলেন ইন্দ গুড়ুং নামে আধিকারিক। বর্তমানে তিনি কীর্ণাহার শাখায় কর্মরত। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ব্যাঙ্কের বর্তমান ম্যানেজার অভিজিৎ সামন্ত সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, “সিবিআই আধিকারিকরা এসেছিলেন। তাঁদের কিছু প্রশ্ন রয়েছে। আমরা যথা সম্ভব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এর সঙ্গে সাধারণ গ্রাহকদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।”
অন্যদিকে যে সময় ওই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল সেই সময়ের সিউড়ির কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন নুরুল ইসলাম তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্যর পাশাপাশি ব্লক তৃণমূল সভাপতি। তিনি বলেন, “আমি বোর্ড চেয়ারম্যান ছিলাম। বোর্ডের আরও সদস্যরাও আছে। ব্যাঙ্কের লেনদেনের ক্ষেত্রে বোর্ডের কোনো ভূমিকা নেই। যদি ব্যাঙ্কের লেনদেন সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসত নিশ্চই আমরা দেখতাম। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ কখনও আসেনি এবং কেউ জানায়ওনি। আর ব্যাঙ্কের লেনদেনের ব্যাপার ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা বলতে পারবেন। আমার এই বিষয়ে কিছু জানা নেই।”