সরকারি নির্দেশে ক্ষুব্ধ আলু ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটে! মঙ্গল থেকেই জোগান কমে গিয়ে আরও দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা

হিমঘর খোলা। কিন্তু আলু বেরোচ্ছে না! ব্যবসায়ীদের ডাকা কর্মবিরতির জেরে আবার বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জোগান না বাড়লে মঙ্গলবার থেকেই অগ্নিমূল্য হতে পারে আলু।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর আলুর দাম কমানোর ব্যাপারে সরকারি চাপের মুখে পড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। তাদের অভিযোগ, বাজারে জোগান বাড়িয়ে আলুর দাম কমাতে গিয়ে কোনও রকম লিখিত নির্দেশ ছাড়াই আলুবোঝাই ট্রাক রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে আটকে রাখা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে শনিবার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ীদের ওই সংগঠন। রবিবার এমনিতেই হিমঘর বন্ধ থাকে। কিন্তু সোমবার বিভিন্ন জায়গায় হিমঘর খোলা হলেও, কর্মবিরতির কারণে আলু বার করা হচ্ছে না সেখান থেকে। গত শনিবার হিমঘর থেকে যে পরিমাণ আলু বার করা হয়েছিল, তা-ও বাজারে প্রায় শেষের দিকে। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা, খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে যা আলু মজুত আছে, তা তাঁরা দাম বাড়িয়েই বিক্রি করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পর প্রশাসনিক তৎপরতায় অন্য আনাজের দাম কমলেও আলুর দামে বিশেষ হেরফের হয়নি। গত কয়েক দিন ধরেই হুগলি, বর্ধমানের খোলা বাজারে জ্যোতি আলু কেজিতে ৩২-৩৩ টাকা ও চন্দ্রমুখী আলু কেজিতে ৩৮-৪০ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। দাম আরও বাড়লে তা আর সাধারণের সাধ্যের মধ্যে থাকবে না বলেই মনে করছেন ক্রেতারা।

প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার আলু ব্যবসায়ী কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন। ২০১৪ সালে এ রকম হয়েছিল। ভিন্‌রাজ্যে আলু যাওয়া আটকানো হয়েছিল। তবে এ বার নির্দেশ নেই। কিন্তু পুলিশি হয়রানি হচ্ছে রাজ্যের সীমান্তগুলিতে। মুখ্যমন্ত্রী বাইরে পাঠাতে বারণ করেননি। উনি নজরদারি করতে বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর মিটিংয়ের পর থেকে আলুর দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। নিয়ন্ত্রণে থাকার পরেও যদি বাইরে আলু যাওয়া আটকানো হয়, তা হলে ব্যবসা করব কী করে।’’ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এ রকম আলুও থাকে, যেগুলি এ রাজ্যে বিক্রি হয় না। বিক্রি হয় বাইরের রাজ্যে। তা-ও আটকে দেওয়া হচ্ছে। আলু ব্যবসায়ী সমিতির শালবনি শাখার সভাপতি নবকুমার ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আজ থেকে স্টোরে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। আলু বার হয়নি হিমঘর থেকে।’’

মজুত রুখে বাজারে জোগান বাড়িয়ে আলুর দাম কমানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার আলুর জোগান বাড়াতে গিয়ে হিমঘর দ্রুত খালি হয়ে গেলে বছরের শেষে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তখন ফের আলুর দাম আকাশ ছোঁবে। আলুর মজুত ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে রীতিমতো হিসাব কষে পা ফেলতে হচ্ছে প্রশাসনকে। শুধু তা-ই নয়, আলুর দাম বাড়তে থাকায় এ বার নির্ধারিত সময়ের আগেই এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে হিমঘর খোলা হয়েছে। নতুন আলু তখন থেকেই বেরোচ্ছে। তার পরেও দাম কমেনি। আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, পাইকারি বাজারে দাম ঠিকই থাকছে। কিন্তু খুচরো বাজারে গিয়ে তা বেড়ে যাচ্ছে। হিমঘর থেকে বেরোনোর পরে একাধিক আড়ত ঘুরে খুচরো বাজারে পৌঁছয় আলু। এক শ্রেণির আড়তদার অতিরিক্ত মুনাফা লুটছেন বলেই আলুর দাম সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আগে অসাধু আড়তদারদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা দরকার। তা না করে ভিন্‌রাজ্যে আলু যাওয়া আটকে দেওয়া হচ্ছে! প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি উত্তম পালের হুঁশিয়ারি, প্রশাসন তাঁদের দাবি না মানলে কর্মবিরতি অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলবে।

রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্নার বাড়ির অদূরে রতনপুরের হিমঘরে অবশ্য কর্মবিরতির প্রভাব ছিল না সোমবার। সিঙ্গুর-রতনপুর আলু ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক প্রহ্লাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি যে কারণে কর্মবিরতি ডেকেছে, আমরা তা সমর্থন করি। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আমরা বাজার খোলা রেখেছি। না হলে আলুর দাম আগুন হয়ে যাবে। সরকারের উচিত বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করা ও যে ট্রাকগুলি আটকে আছে, তাদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।’’

রাজ্য সরকার অবশ্য ‘সুফল বাংলা’ স্টলের মাধ্যমে আলু বিক্রির পরিকল্পনা করেছে দামে লাগাম পরাতে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক কে রাধিকা আয়ার বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই সুফল বাংলার স্টল খুলেছি জেলার বিভিন্ন জায়গায়।’’ ভিন্‌রাজ্যে আলুর গাড়ি পাঠানোর দাবি নিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী যা করার করছি।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.