গণপ্রহার নিয়ে এতদিন ভারতীয় দণ্ডবিধিতে আলাদা করে কোনো বিধি ছিল না। সোমবার থেকে দেশে চালু হওয়া নয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় এই গণপ্রহরের ধারা যুক্ত হয়েছে। গণপ্রহারের জেরে মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে নতুন আইনে। দেশে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন চালু হয়েছে, সোমবার তা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে গণপ্রহারের বিষয়টিতে জোর দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নতুন আইনে কী কী বিধান রয়েছে তা স্পষ্ট করেছেন তিনি। একই সঙ্গে বিরোধীদের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বার্তা, নতুন আইন নিয়ে রাজনীতি না করে দেশের মানুষের স্বার্থে তা সমর্থন করুন।
দেশে প্রায়শই গণপ্রহারের মতো ঘটনা ঘটে। কখনো অপরাধীরা শাস্তি পান, আবার কখনো ছাড়া পেয়ে যান। এর ফলে ভুক্তভোগীদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি একের পর এক গণপ্রহারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে।
গণপ্রহারের জেরে মৃত্যু হলে পুলিশ খুন বা খুনের চেষ্টায় ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত করত। কিন্তু নতুন আইনে গণপ্রহারকে আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে, আর তাতে কী শাস্তি হবে তার উল্লেখ রয়েছে।
শাহ বলেন, আইনে গণপ্রহার নিয়ে কোনো বিধান ছিল না। নতুন আইনে গণপ্রহারকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। গণপ্রহার নিয়ে বিধান আনার দাবি দীর্ঘদিনের। গণপ্রহারের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে নতুন আইনে দণ্ড এবং ন্যায়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন আইনে সাজার থেকে সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায় পান সেটাই দেখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঔপনিবেশিক যুগের ফৌজদারী আইন সংশোধনের পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থায় ভারতীয় আত্মা যোগ করা হয়েছে। এই বিধানগুলি এমন যে, এতে অনেক গোষ্ঠী উপকৃত হবে। ব্রিটিশ আমলের অনেক আইনের ধারা এমন যা আজকের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
নতুন আইনে নারী সুরক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।নতুন আইনে ভুক্তভোগী বাড়িতে বসে নিজের বয়ান দিতে পারবেন। অনলাইনে এফআইআর দায়ের করতে পারবেন।
দেশদ্রোহের ধারা সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিয়েছেন। তার পরিবর্তে দেশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য একটি নতুন ধারা নিয়ে এসেছেন। এখন কেউ যদি ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা, অখণ্ডতার ক্ষতি করার চেষ্টা করেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরাধীর প্রমাণ জোগাড়ে ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তল্লাশি অভিযানের সময়ও ভিডিওগ্রাফি করতে হবে, কাউকে যাতে ফাঁসানো না যায়। সে কথা মাথায় রেখেই শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, যৌন হয়রানির মতো ঘটনায় ভুক্তভোগীরই বিবৃতি আইনত বৈধ।
শাহ বলেন, আগে পুলিশ কাউকে তুলে নিয়ে গেলে তার পরিবারের সদস্যদের আদালতে ছুটতে হতো। এখন আমরা প্রতিটি থানায় একটিই রেজিস্টার রাখা বাধ্যতামূলক করেছি। সেখানে কোন কোন অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন তার তালিকা থাকবে।
ব্রিটিশ জমানা থেকে চলে আসা ভারতীয় আইনে বদল এনেছে মোদী সরকার। ১৮৬০ সালে তৈরি ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা হয়েছে। ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্টটির নতুন রূপ ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা। ১৮৭২ সালের ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্টের বদলে কার্যকর হচ্ছে ভারতীয় সাক্ষ্য অধীন নিয়ম।
নতুন আইন সংসদে পাস করানো নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন । তাদের অভিযোগ, কোনো আলোচনা ছাড়াই বিল পাস করানো হয়েছে সংসদে। সেই অভিযোগের পাল্টায় শাহ বলেন, এই বিল নিয়ে লোকসভায় ৯ ঘন্টা ৩৯ মিনিট ধরে আলোচনা চলেছে। আলোচনায় ৩৪ জন সাংসদ অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাজ্যসভাতে সাত ঘন্টা আলোচনা হয়। বিল আগে থেকেই সংসদে তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়েছিল।
তিনি জানান, নতুন আইন সম্পর্কে সমস্ত সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের বিচারপতিদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিল তার মন্ত্রক। সেইসব পরামর্শ পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নতুন আইন দেশের ১৪০ কোটি মানুষের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে।এটা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়, আমি চাই বিরোধীরা সমর্থন করুক। নতুন আইন নিয়ে যে কোনো আলোচনার জন্য আমার মন্ত্রকে দরজা খোলা আছে আমি সকলের কথা শুনবো।