অনুপ্রবেশকারীরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যঙ্ক। তাই রোহিঙ্গা বা অনুপ্রবেশকারীদের লাল কার্পেট বিছিয়ে তৃণমূল নেত্রী আহ্বান জানান। কিন্তু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে সিএএ ইস্যুতে মানুষকে ভুল বোঝান। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গে প্রথম ভোট প্রচারে এসে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে এভাবেই তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটে বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারের সমর্থনে শাহের আজকের সভায় মানুষের ভিড় ছিল নজরকাড়া। মানুষের জন্য তৈরি করা ছাউনি উপচে প্রবল রোদে দাঁড়িয়ে শাহের বক্তব্য শুনেছেন মানুষ। আর এতেই অমিত শাহ দাবি করেছেন, তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে মানুষ কতটা দৃঢ় সেটা স্পষ্ট এই ঘটনায়।
আজ মঞ্চ উঠে উপচে পড়া ভিড় দেখে অমিত শাহ বলেন, “বিজেপির পরিবারের তরফ থেকে আমরা বালুরঘাটের সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, কারণ আমরা ভাবতে পারিনি যে এত বড় ময়দান সাধারণ মানুষের জন্য ছোট হয়ে যাবে। হাজার হাজার মানুষকে ময়দানের ছাউনির বাইরে থাকতে হবে। আমরা বুঝতে পারিনি যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের রাগ এতটাই প্রচন্ড যে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের মধ্যেও তারা তৃণমূলকে শেষ করে দিতে সমস্ত রকমের ঝঞ্ঝা সহ্য করতে প্রস্তুত। আমরা বুঝতে পারিনি য মোদীর পরিবার মোদীকে দু’হাত ভরে ভালোবাসা দিতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।” অমিত শাহ জানান, তিনি এরজন্য বালুরঘাটের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন।
তবে আজকের সভায় অমিত শাহের আক্রমণের মূলে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর কথায়, সোনার বাংলাকে মমতা দিদি বোমা বন্দুকে ভরিয়ে দিয়েছেন, কাটমানি, দুর্নীতিতে পরিণত করেছেন। শক্তিশালী ভারত যদি বানাতে হয়, তবে শক্তিশালী বাংলা বানাতে হবে। যদি পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ চলতে থাকে তাহলে কিভাবে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন সম্ভব? মমতা দিদি অনুপ্রবেশ বন্ধ করবেন না, কারণ ওটাই ওঁর ভোট ব্যাঙ্ক। অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পারেন নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার। অসমেও এমন অনুপ্রবেশের সমস্যা ছিল। এখন অসমে সীমানা তৈরি হয়েছে। অনুপ্রবেশের কোনও সমস্যা আর নেই।” মোদীর গ্যারান্টি দিয়ে শাহ বলেন, “৩০টির বেশি আসন দিন, কথা দিচ্ছি একটি পাখিও অবৈধ অনুপ্রবেশ করার সাহস পাবে না।”
তবে শুধুমাত্র তৃণমূল নয়, বামেদেরকেও ছেড়ে দেননি অমিত শাহ। তিনি বলেন, এই রাজ্যে এত দারিদ্রতার মূল কারণ হল কমিউনিস্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেস। তাই এখানকার দই, তাঁতের শাড়ি, সিল্ককে প্রসিদ্ধ করতে হলে মোদীকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
তাঁর অভিযোগ,”মমতা দিদি, কংগ্রেস পার্টি,কমিউনিস্টরা মিলে রাম মন্দিরকে আটকাতে চেয়েছে। ১৭ তারিখ রাম নবমী আছে। ৫ বছরের মধ্যেই আমরা রাম মন্দিরের কাজ পুরো শেষ করেছি। ৫০০ বছর পর রামলালা নিজের বাড়িতে নিজের জন্মদিন পালন করবেন। এই দলগুলো তোষণের রাজনীতির জন্য রাম মন্দির হতে দেয়নি।”
তিনি বলেন, ১০ বছরে দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে মোদী সরকার অনেক কাজ করেছেন। ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য সীমা থেকে বের করে এনেছেন। ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিয়েছেন।
আজ প্রত্যাশা মতোই সিএএ ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রাখেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, “আমি বাংলার মানুষকে হাত জোড় করে অনুরোধ করতে চাই আমরা সিএএ আইন লাগু করেছি। কিন্তু মমতা দিদি বাংলার মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে যে এপ্লিকেশন করলে আপনার নাগরিকত্ব চলে যাবে। আপনারা ভয় না পেয়ে যত শরণার্থী আছেন সকলে আবেদন করুন সিএএ পোর্টালে। কারও নাগরিকত্ব চলে যাবে না। এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। এটা কেউ পরিবর্তন করতে পারবেন না।”
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দেগে তিনি প্রশ্ন করেন,হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পেলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?” শাহ বলেন, আপনি একদিকে অনুপ্রবেশকারীদের লাল কার্পেট বিছিয়ে স্বাগত জানান, রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানান, আর অপরদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ শরণার্থীদের ভুল বোঝাচ্ছেন।”
বালুরঘাটের সভা থেকে ভূপতিনগর ও সন্দেশখালি নিয়েও সরব হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।