সম্প্রতি কয়েক কোটি টাকার বমি পাওয়া গিয়েছে তামিলনাড়ুতে। সেই বমির মূল্য কয়েক কোটি। শুনে চমকে গেলেন? ঘটনাটি সত্যিই। কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি হয় এই প্রানীর বমি। সাগরে ভাসা সেই সোনা আসলে তিমি মাছের বমি। তিমি মাছের এই বমি আসলে দুর্লভ আর এই দুর্লভ জিনিসটি মানুষের প্রাণও বাঁচায় তাই তার মূল্য কয়েক কোটি। তিমি মাছের বমিকে (Vomit of Whale) বলা হয় অ্যাম্বারগ্রিস। স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে কি আছে এতে যাতে তিমি মাছের বমির এত দাম হয়?
তিমি মাছের পাকস্থলীতে যে অ্যাম্বারগ্রিস তৈরি হয় সেটি তৈরি হতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায় । জলে তিমি মাছ হাজার হাজার স্কুইড খেয়ে থাকে। এই স্কুইডগুলো তিমি মাছের পাকস্থলী ও অন্ত্রের মাঝখানে কোন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে জমা হয়। সেই জমে থাকা স্কুইডগুলো দীর্ঘদিন পরে অ্যাম্বারগ্রিসে পরিণত হয়। সেই অ্যাম্বারগ্রিস তিমি কোন এক সময় মুখ থেকে বার করে দেয়। অ্যাম্বারগ্রিস আসলে খানিকটা মোমের মতো পিচ্ছিল পদার্থ হয়। যখন প্রথম এই অ্যাম্বারগ্রিস মুখ থেকে বার করে তিমি তা দুর্গন্ধময় হয়। কিন্তু সমুদ্রের তীরে আসার পর যখন এটি শক্ত হয়ে যায়, তখন খুবই সুগন্ধ বের হয়।
কিন্তু কী কাজে লাগে এই অ্যাম্বারগ্রিস? বিশ্বের বিভিন্ন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অনস্বীকার্য। এছাড়াও যেকোনো দামি সুগন্ধি তৈরি করতে এর চাহিদা অতুলনীয়। অতএব বোঝা যাচ্ছে কেন তিমি মাছের বমির দাম এত বেশি? আর ঠিক এই কারণেই বিজ্ঞানীরা তিমি মাছের বমি কে “ভাসমান সোনা” বলেও আখ্যা দেন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, তিমি মাছের বমিতে অ্যালকোহল উপস্থিত থাকে। কিন্তু প্রথমে এই বমির গন্ধ খানিকটা মলের মত হয়। ধীরে ধীরে এটি কাদা মাটির মতো রূপ নিতে থাকে। একদম শেষে জলে থাকা অবস্থায় এটি ঠান্ডা হয়ে শক্ত পদার্থে পরিণত হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে তিমির বমির মূল্য কোটি টাকায। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছু অবৈধ পাচারকারী এটিকে পাবার জন্য অবৈধভাবে তিমি মাছ শিকার করে থাকে। কিন্তু ভারতীয় আইন অনুযায়ী, অ্যাম্বারগ্রিস সংগ্রহ করা কিংবা বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সম্প্রতি ভারতের রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর একটি চোরাকারবারিদের ব্যবসা ফাঁস করেছে যারা কিনা অ্যাম্বারগ্রিস পাচার করত। এটি হয়েছে ডিআরআই তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন উপকূলে। সেখানে ১৮. ১ কেজির একটি অ্যাম্বারগ্রিস উদ্ধার করা হয়েছে যার বাজারদর হল ৩১.৬৭ কোটি টাকা।