আরএসএস-এর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার দায়ে নিগৃহিত হলেন এক নবীন শিল্পী। হুমকির জেরে রাতারাতি কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হলেন তিনি। অভিযুক্তরা তৃণমূলের সমর্থক। দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা।
কিছুকাল আগে সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন শীর্ষ আচার্য (২৪)। তিন পুরুষ ধরে তাঁরা আরএসএস-এর স্বেচ্ছাসেবী। শীর্ষর ঠাকুর্দা রাজশাহী থেকে এপার বাংলায় আসার পর ‘সঙ্ঘী’ হন। শীর্ষ কলকাতায় সঙ্ঘের কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ জড়িত থাকতেন না। শিল্পী-ভাস্কর হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকতেন।
বছর দুই হল ৩/বি যাদবগড়ে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন শীর্ষ। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্নাতকোত্তরে ভর্তির পরীক্ষার জন্য। কমার্শিয়াল আর্ট ও নবীন শিল্পীদের আঁকা শিখিয়ে কলকাতায় থাকার খরচ তোলার চেষ্টা করতেন।
সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি মাসে রামমন্দির উদ্বোধনের আগে আরএসএস-এর তরফে ২-১ জন স্বেচ্ছাসেবী যাদবগড়ে ‘অক্ষরচাল’ বিলি করেন। শীর্ষর সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছিল। সেটি কিছু স্থানীয় তৃণমূল কর্মীর চোখে পড়ে। তার পর থেকে ওই ছেলেরা শীর্ষ ও তাঁর ফেসবুকের ওপর নিয়মিত নজর রাখছিল।
গত রবিবার রাতে একটি ছেলে শীর্ষর বাড়িতে এসে শাসায়। শীর্ষ বিষয়টি স্থানীয় (১০৫ ওয়ার্ড) প্রাক্তন কাউন্সিলর তরুণ মণ্ডলকে জানান। তিনি শীর্ষকে বলেন, সোমবার ১১টায় পার্টি অফিসে এলে কথা বলে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সেই অনুযায়ী শীর্ষ সেখানে যান। কিন্তু তরুণবাবুকে পাননি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শীর্ষ যখন চলে আসছিলেন, কিছু ছেলে তাঁকে পার্টি অফিসের ভেতর নিয়ে যায়। বিজেপি-আরএসএস-এর নামে কিছু মন্তব্য করে তাঁকে মারে। তাঁর চশমা ভেঙে যায়। ছেলেরা বলে, “এখনই এলাকা ছেড়ে চলে যা। রাত অবধি থাকলে পুকুরে ভাসিয়ে দেবো।”
শীর্ষ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বিজেপি নেতা দেবজিৎ সরকারকে জানান। ২০ মিনিটের মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে অকুস্থলে চলে আসেন দেবজিৎ। তিনি পাশে থাকার আশ্বাস দিলেও ঝুঁকি নেননি শীর্ষ। অল্প জিনিস ব্যাগে ঢুকিয়ে বিকেল ৫টায় বেড়িয়ে পড়েন। শিয়ালদা থেকে ৭টার ট্রেন ধরে ১১টায় পৌঁছোন মুর্শিদাবাদে। সেখান থেকে গভীর রাতে নিজের বাড়িতে।
এই প্রতিবেদক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে শীর্ষ বলেন, “ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং আতঙ্কের জন্য আমি একটা কথাও বলার মত অবস্থায় নেই।” কসবা থানায় খোঁজ করলে পুলিশ জানায়, এ রকম কোনও ঘটনা তাঁদের জানা নেই।
এ ব্যাপারে স্থানীয় পুরমাতা সুশীলা মণ্ডলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর সহায়ক বলেন, “দিদি এখন বৈঠকে ব্যস্ত।” এর আগে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন সুশীলা মণ্ডলের স্বামী তরুণ মণ্ডল। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “হ্যাঁ। আমি একটা ফোনে শুনেছিলাম কার একটা কী সমস্যা হয়েছে। আমি তাঁকে সোমবার ১১টায় পার্টি অফিসে আসতে বলি। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে আটকে পড়ায় পার্টি অফিসে আসতে পারিনি। তার পর আর কেউ কিছু জানায়নি তো আমাকে!”
কলমলেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেবযানী ভট্টাচার্য সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “শীর্ষ আচার্য্যকে তার কসবার ভাড়াবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে সে শ্রী রাম ও মন্দির আদি ছবি আঁকে বলে? খবরটা ওয়াটস্অ্যাপে এসেছে।” খবরটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করেন দেবযানী। অপর একটি পোস্টে দেবযানী লিখেছেন, “অভিনন্দনের দাবীদার হবেন সমস্ত ‘নামে হিন্দু ভাবে সেক্যুলার’ দক্ষিণ কলকাতাবাসী। প্রথমে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হল সরস্বতী সরকারের, তারপর তাড়ানো হল শীর্ষ আচার্য্যকে। দুই-ই কসবায়। কসবা কি কলকাতার নতুন মিনি পাকিস্তান? সিপিএমের শতরূপ ঘোষ আর টিএমসির জাভেদ আহমেদ খানের এখন সেলেব্রেশন পার্টি টাইম? Are you all hearing anyone of CPM talking about these incidents? Demography is destiny.
অভিনেতা-নির্দেশক সঞ্জয় দাস জানিয়েছেন,
“কাল রাতে চড় থাপ্পড় মেরে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে , কোনও প্রতিবাদ নেই কোথাও।”
হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক