এত রক্ত ছিল শরীরে? ভাগ্যক্রমে, প্রতিটি বিন্দু অর্পণ করে গেলাম দেশমাতার চরণে।”
যাঁর মৃত্যুর সময় এই রকম কথা বার হয় মুখ দিয়ে তাহলে তাঁর সম্পর্কে বোধহয় আর কেশী কিছু বলারই থাকে না। ভারাতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে প্রথমে যে কটি নাম উঠে আসে তাঁর মধ্যে অন্যতম হলেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, যদিও তিনি বাঘা যতীন নামেই আমাদের কাছে বেশী পরিচিত।
ছোট বেলা থেকেই খুব দুরন্ত আর সাহসী ছিলেন ছোট্ট যতীন, পিতার মৃত্যুর পর মামা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন যতীন। তাঁর মা শরৎশশীও যতীনের এই দুরন্তপনাকে মেনে নিতেন, উপরন্তু কেউ কিছু বললে তাঁকেও কথা শোনাতে ছাড়তেন না। মা এর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে যিনি শুধুমাত্র একটি ছোরা নিয়েই বাঘ মেরেছিল বলেই তাঁকে বাঘাযতীন নামে ডাকা হতো।
এরপর তিনি যোগদান করেন সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে, অপ্রতিরোধ্য যতীন হয়ে বিট্রিশদের চরম শক্রু, এই শত্রুতা গিয়ে পৌঁছায় বুড়িবালামের যুদ্ধে, দুর্গম ডুভিগর পর্বতশ্রেণী দিয়ে গা ঢাকা দেওয়া নিয়ে যখন কেউ কেউ যখন জল্পনা-কল্পনা করছেন, যতীন দৃঢ়ভাবে জানালেন, “আর পালানো নয়। যুদ্ধ করে আমরা মরব। তাতেই দেশ জাগবে।” সেপ্টেম্বর গভীর রাত্রে যতীন নিজের সাময়িক আস্তানা মহলডিহাতে ফিরে এলেন। ৮ সেপ্টেম্বর সারাদিন কেটে গেল গভীর জঙ্গলে। সারারাত পায়ে হেঁটে ৯ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা পৌঁছলেন বালেশ্বরের নদী বুড়ি বালামের উপকণ্ঠে। সাঁতার কেটে নদীর ওপারে গিয়ে যুদ্ধের পক্ষে মোটামুটি উপযুক্ত শুকনো এক ডোবার মধ্যে আশ্রয় নিলেন। ৯ ই সেপ্টেম্বর ১৯১৫ সালে সূর্যাস্তের সংগে অবসান হল এই যুদ্ধের। পরদিন বালেশ্বর সরকারি হাসপাতালে যতীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
এই মহান বিপ্লবীকে নিয়ে যতোই বলি, ততোই কম বলা হয়, ভারতের স্বাধীনতা তথাকথিত সূর্য হয়তো অস্ত গিয়েছিল ৯ ই সেপ্টেম্বরে কিন্তু বাঘাযতীনের আদর্শ সারাজীবন বেঁচে ছিলো, আছে আর থাকবেও।
আজ ৭ই ডিসেম্বর বিপ্লবী বাঘাযতীনের ১৪৩ তম জন্মদিনে ভারতমাতার এই বীরপুত্রের চরণে শতকোটি প্রণাম জানাই আমরা।
আসুন আজ তাঁর জন্মদিনে আমরা সকলে শপথ তাঁর আদর্শে চলার, অন্যায় সহ্য না করে এক নতুন পথে হাঁটার, আজ জীবন হোক বাঘা যতীনময়।
কলমে :- মৌ (সৌনীতাসাহিত্যপত্রিকাওপ্রকাশনী)