আবার পথের বলি, গাড়ির ধাক্কায় পুলিশকর্মী-সহ দু’জনের মৃত্যু খড়্গপুরে, ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু দাসপুরে

কলকাতার বেহালার পর আবার রাজ্যে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দু’টি দুর্ঘটনায় এক পুলিশকর্মী-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন কয়েক জন। রাজ্য সরকারের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির পরও বার বার পথ দুর্ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

শুক্রবার রাতে খড়্গপুর গ্রামীণের বেনাপুর রেলগেটের কাছে একটি অডি সংস্থার গাড়ির ধাক্কায় এক পুলিশকর্মী-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও চার জন। তাঁদের দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ বেনাপুর রেলগেটের কাছে টহলরত পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোডে দাঁড়িয়ে ছিলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী রামানন্দ দে। তিনি খড়্গপুর গ্রামীণ থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার তালডাংরায়। সেই সময় খড়্গপুর অভিমুখে থাকা একটি গাড়ি দ্রুতগতিতে এসে ওই পুলিশকর্মীকে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে যান রামানন্দ। এর পরেই গাড়িটি রেলগেটের সিগন্যাল পোস্টে ধাক্কা মেরে বাঁ দিকে থাকা একটি ঝুপড়ি চা দোকানে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা অন্য পুলিশকর্মীরা রামানন্দকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। উদ্ধারকাজে হাত লাগান স্থানীয়রাও। তাঁদের সাহায্যে গাড়ি থেকে পাঁচ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই গাড়ির সওয়ারি জাহাঙ্গিরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। জানা গিয়েছে, মকরামপুরের একটি ধাবায় খাওয়াদাওয়া করে গাড়িতে ফিরছিলেন জাহাঙ্গির এবং তাঁর সঙ্গীরা। পেশায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গির (৩৫) খড়্গপুর শহরের পাঁচবেড়িয়ার বাসিন্দা। জাহাঙ্গিরের সঙ্গী ওই গাড়ির সওয়ারি ইন্দার অভিষেক শ্রীবাস্তব, সুজিত রায়, ঝাপেটাপুরের প্রদীপ দাস এবং পুরাতন বাজারের চন্দনকুমার দাস গুরুতর জখম হয়েছেন।

অন্য দিকে, শনিবার ভোর ৪টে নাগাদ দাসপুর থানার বেলতলা এলাকায় একের পর এক দোকান এবং কয়েক জন ব্যক্তিকে ধাক্কা মারে চাল বোঝাই একটি ট্রাক। এই দুর্ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত জয়েছেন আরও তিন জন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘাটাল থেকে পাঁশকুড়ার দিকে যাচ্ছিল একটি চাল বোঝায় ট্রাক। সেই সময় দাসপুর থানার বেলতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে প্রথমে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মারে। তার পর মাছের আড়তে থাকা চার ব্যাক্তিকে ধাক্কা মারে ট্রাকটি। একটি বাইকেও ধাক্কা মারে। তার পর আরও একটি পিক আপ ভ্যানে ধাক্কা মারে ওই ট্রাকটি। চার জনকে উদ্ধার করে ঘাটাল মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের নাম গোপীনাথ মণ্ডল। তাঁর বাড়ি দাসপুর থানার বসন্তপুর এলাকায়। দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

শুক্রবার রাতে দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ওঠার মুখে লরির ধাক্কায় এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। তার আগে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ কলকাতার বেহালা এলাকায় মাটি বোঝাই লরির ধাক্কায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। এই দুর্ঘটনায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির মধ্যে কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে ফোন করে তা জানতে চান তিনি। সেই ঘটনার পর পরই রাজ্যে আরও তিন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.