মোদীর পরেই শাহের সফর, সঙ্গে নড্ডাও, ৩৫ আসনের লক্ষ্যে বিজেপির রণকৌশল বানাতে বসবেন কলকাতায়

সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হলেই লোকসভা নির্বাচনের উত্তাপ বাড়াতে শুরু করবে বিজেপি। ২২ ডিসেম্বর অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা। আগামী ২৪ ডিসেম্বর কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যোগ দেবেন ব্রিগেড ময়দানে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচিতে। রাজনৈতিক কর্মসূচি না হলেও বিজেপির লক্ষ্য মোদীর উপস্থিতিতে হওয়া অনুষ্ঠান থেকে লোকসভা ভোটের হাওয়া তোলা। কারণ, অনেক দিন পরে কোনও সমাবেশে যোগ দিতে রাজ্যে আসছেন মোদী। আর তার পরে পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে আসবেন। বিজেপি সূত্রে খবর, শাহের সেই সফরের সময় কলকাতায় আসতে পারেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও এমন যৌথ সফরের পরিকল্পনা রয়েছে শাহ এবং নড্ডার। সেই সফরের মূল লক্ষ্য, কলকাতায় রাজ্য নেতাদের নিয়ে বসে লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল তৈরি করা।

মঙ্গলবারই রাজ্য বিজেপির সল্টলেক দফতরে বসে রাজ্য নেতৃত্বের বিশেষ বৈঠক। বাংলার সঙ্গে তেলেঙ্গানারও দায়িত্বে থাকা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল অনেক দিন পরে রাজ্যে আসেন। তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচন পর্ব শেষ হতেই তিনি মঙ্গলবার রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে রাজ্যের পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে এবং দুই সহ-পর্যবেক্ষক আশা লাকড়া ও অমিত মালব্যও ছিলেন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ রাজ্য নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেখানে মূল আলোচনার বিষয়ই ছিল লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্যালোচনা। আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। তার আগে দল তালিকা সংশোধনে কতটা অংশ নিতে পেরেছে তা নিয়েও আলোচনা হয়। দল যে ১০০ শতাংশ জায়গায় সেটা পারবে না, সেটা আগে থেকেই জানা ছিল। তবে যেটুকু কাজ হয়েছে তাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব খুশি না হলেও অখুশিও নয়, এমনটাই জানালেন বৈঠকে উপস্থিত এক রাজ্য নেতা। আপাতত অতীত ভুলে আগামী নিয়ে ভাবার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।

সেখানেই উঠে আসে বুথস্তরের সংগঠনকে দ্রুত শক্তিশালী করার প্রসঙ্গ। এ নিয়ে রাজ্য নেতাদের বক্তব্য শোনেন সুনীল, মঙ্গলরা। রাজ্য বুথস্তরে সংগঠন ঠিক করতে কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা রাজ্য নেতাদের মুখে শোনেন তাঁরা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সবটা শোনার পরে সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় রাজ্য নেতৃত্বকেই খুঁজে বার করতে হবে বলে জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কোথায় কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া যায়, তা-ও ভাবতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্দেশ, জানুয়ারি মাসের মধ্যে বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচি শেষ করতে হবে।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকেই সুনীল রাজ্য নেতাদের জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি শাহ এবং নড্ডা আসবেন রাজ্যে। দু’জনে একসঙ্গেও আসতে পারেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই নেতার এই সফরে বড় মাপের কোনও জনসভা না-ও হতে পারে। তবে দফায় দফায় হবে সাংগঠনিক বৈঠক। বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ডেকে বৈঠক হতে পারে। ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপি ৪২টি লোকসভা পিছু এক জন করে এবং ২৯৪ বিধানসভা এলাকার প্রতিটিতে এক জন করে মোট ৩৩৬ জন বিস্তারক নিয়োগ করেছে। সোম এবং মঙ্গলবার তাঁদের প্রশিক্ষণ শিবিরও হয়। এই বিস্তারকদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন শাহ, নড্ডা। কবে সেই সফর, সে ব্যাপারে অবশ্য কিছুই বলতে রাজি নয় গেরুয়া শিবির। সুকান্তকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো নিয়মিত আসেন। এটা আমাদের দলের পরম্পরা। নভেম্বরেই তো অমিত শাহজি এসেছিলেন। বিভিন্ন রাজ্যে ভোট এবং সংসদে অধিবেশন থাকায় কিছুটা সময় সফর কমে গিয়েছিল। জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসেই তাঁরা আসবেন।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.