জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ জওয়ান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সেনার রাইফেলম্যান গৌতম কুমারও (২৮)। তিনি উত্তরাখণ্ডের কোটদ্বারের বাসিন্দা। চার মাস পরেই তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বাড়িতে সেই আয়োজন ছিল তুঙ্গে। কিন্তু সব আনন্দ-আয়োজন থমকে যায় একটি ফোনে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গৌতমের পরিবারের কাছে পৌঁছয় তাঁর মৃত্যু সংবাদ। তার পর থেকেই হাহাকার গোটা পাড়ায়।
গৌতমের বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল ২০২৪ সালের ১১ মার্চ। এর আগে ডিসেম্বরেই ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দেন গত ১৬ ডিসেম্বর। তার ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় জঙ্গিদের গুলি ঝাঁঝরা করে দিয়েছে গৌতমের দেহ।
গৌতমের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর ভাই রাহুল কুমার। তিনি জানান, কী ভাবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের একটি ফোন তাঁদের সকলের জীবন বদলে দিয়েছে। ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ তাঁদের কাছে এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে, এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি পরিবারের সদস্যেরা। বিয়ের তোড়জোড় চলছিল গোটা বাড়িতে। সেই আনন্দে সকলে মেতে ছিলেন। সব আনন্দ গাঢ় বিষাদে পরিণত হয়েছে।
শনিবারই গৌতমের দেহ পৌঁছবে কোটদ্বারে। জেলা প্রশাসন দেহ পরিবহণের বন্দোবস্ত করেছে। তার পর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে খবর প্রশাসন সূত্রে।
গৌতমের সঙ্গেই শহিদ হয়েছেন উত্তরাখণ্ডের আরও এক জওয়ান। তিনি নাইক বীরেন্দ্র সিংহ, চামোলি জেলার বামিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী এবং দুই কন্যা আছেন। বৃহস্পতিবারের পর থেকে হাসি নেই তাঁদের মুখেও।
বৃহস্পতিবার জম্মু ডিভিশনের পুঞ্চ এবং রাজৌরি জেলার সীমানায় সেনার দু’টি গাড়িতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। সুরনকোট থানার অধীন বাফলিয়াজ় থেকে রাজৌরির দিকে যাচ্ছিল সেনার গাড়ি দু’টি। বাফলিয়াজ় এবং ডেরা কি গলির মাঝের পাহাড়ঘেরা অঞ্চলে গভীর অরণ্য রয়েছে। তারই সুযোগ নেয় জঙ্গিরা। বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ টোপা পীর অঞ্চলের কাছে একটি সঙ্কীর্ণ পাহাড়ি বাঁকের মুখে সেনার জিপ এবং ট্রাকের উপরে হামলা চালানো হয়। বাঁকের মুখে গাড়ির গতি কমতেই ধেয়ে আগে গুলি এবং গ্রেনেডের ঝাঁক। সেনা সূত্রের খবর, জঙ্গিরা হামলায় নিহত সেনাদের মুণ্ডচ্ছেদ করেছে। ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে পাক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবার শাখা সংগঠন ‘দ্য পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট’ (পিএএফএফ)।