অগস্টের গোড়ায় আফগানিস্তানের জ়ারাঞ্জ শহরটি তালিবান দখল করে ফেলার পরেই নয়াদিল্লিতে বিদেশ ও বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। কারণ ইরান সীমান্তে নিমরুজ় প্রদেশের এই রাজধানী শহর থেকেই শুরু হয়েছে ভারতের অর্থসাহায্যে তৈরি ২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ জ়ারাঞ্জ-ডেলারাম হাইওয়ে।
৬০০ কোটি টাকা খরচ করে এই হাইওয়ে তৈরির সময়ই তালিবান এর বিরোধিতা করেছিল। এ বার তালিবান পুরোপুরি আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে ফেলার পরে এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের জ়ারাঞ্জ-ডেলারাম হাইওয়ে ভারতের অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। জঙ্গি হামলা সত্ত্বেও ২০০৯-এ হাইওয়ের কাজ শেষ করে আফগানিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার পর থেকে ভারত-আফগানিস্তান বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই হাইওয়েই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এ বার তালিবান সরকার এই সড়কপথ সম্পর্কে কী অবস্থান নেবে, তা স্পষ্ট নয়। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকে বিদেশ মন্ত্রক এই প্রকল্প নিয়ে চিন্তার কথা জানিয়েছে।
একই ভাবে ইরানের চাবাহার বন্দরকে আইএনএসটিসি বাণিজ্য পথ (ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর)-এর সঙ্গে যুক্ত করে ইরান, আফগানিস্তানের মাধ্যমে মধ্য এশিয়া, ইউরোপে বাণিজ্য পথ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছিল ভারত। ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আইএনএসটিসি বাণিজ্য পথে ভারত, ইরান, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজ়ারবাইজান, রাশিয়া, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য চলাচল হয়। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই বাণিজ্য পথের সঙ্গে চাবাহার বন্দরকে যুক্ত করার দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু এখন তালিবান আফগানিস্তান দখলের পরে মোদী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের গোটা পরিকল্পনার সামনেই প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে গিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পাকিস্তান সে দেশের মধ্যে দিয়ে ভারতকে আফগানিস্তানে পণ্য পাঠাতে না দেওয়ায়, ভারতকে মুম্বই বা গুজরাতের কান্ডলা বন্দর থেকে ইরানের চাবাহার বন্দরে জাহাজে পণ্য পাঠাতে হয়। চাবাহার বন্দর থেকে জ়াহেদান পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে। জ়াহেদান থেকে ইরান-আফগানিস্তান সীমান্তের জ়ারাঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন তৈরি হবে। আফগানিস্তানের মধ্যে দিয়ে জ়ারাঞ্জ থেকে ডেলারাম পর্যন্ত মসৃণ হাইওয়ে গিয়ে পড়ছে হেরাট-কন্দহর-কাবুল-মাজ়ার-এ-শরিফ সংযোগকারী গারল্যাল্ড হাইওয়েতে। ফলে আফগানিস্তানের মধ্যে দিয়ে পণ্য লেনদেন ভারতের পক্ষে সহজ হয়ে গিয়েছে। কোভিড অতিমারির সময়েও ভারত এই পথে ৭৫ হাজার টন গম পাঠিয়েছিল।’’
এ বার এর ভবিষ্যৎ কী হবে? জ়ারাঞ্জ-ডেলারাম হাইওয়ের কাজ চলাকালীন একাধিক জঙ্গি হামলায় ভারতের বর্ডার রোড অর্গানাইজ়েশন ও আইটিবিপি-র মোট ছ’জন কর্মী নিহত হয়েছিলেন। ১২৯ জন আফগানকেও প্রাণ দিতে হয়েছিল। আরও পাঁচ ভারতীয়ের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল। এ বার ক্ষমতাসীন তালিবান কী অবস্থান নেবে, সেটাই প্রশ্ন।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, পাকিস্তান ও চিন চাইবে, ভারতের বাণিজ্য পথের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে। কিন্তু তালিবান মুখপাত্র সুহেল শাহিন সম্প্রতি বলেন, দিল্লি চাইলে আফগানিস্তানের অসম্পূর্ণ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারে। আফগান মাটিকে অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলেও সুহেলের দাবি। এখন সবটাই নির্ভর করছে কাবুলে সরকার গঠনের পরে তালিবান কী নীতি নেয়, তার উপরে।