জামিন পেতে ‘অধরা’ শাহজাহান সই করলেন হলফনামায়, পুলিশ তাঁর নাগাল পাচ্ছে না কেন?

সোমবার তাঁর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে দেখা গেল না শেখ শাহজাহানকে। তবে তাঁর আইনজীবী জাকির হোসেনের সূত্রে দাবি, সোমবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের পরে নিজে হলফনামায় সই করে দিয়েছেন সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান। যদিও এ জন্য তিনি কলকাতায় এসেছিলেন কি না কিংবা অন্য কোথাও দেখা করেছেন কি না, সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, শাহজাহান কখনও অন্তরালে থেকে অডিয়ো বার্তা পাঠাচ্ছেন, কখনও যোগাযোগ করছেন আইনজীবীর সঙ্গে, তা সত্ত্বেও পুলিশ এত দিনেও তাঁকে ধরতে পারছে না কেন?

সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করতে চলেছেন শাহজাহান। সূত্রের দাবি, এই নিয়েই হলফনামা দিয়েছেন তিনি। ইডি সূত্রেরও দাবি, শাহজাহান এই বিষয়টি নিজের আইনজীবী জাকির হোসেনের মারফত তাদের জানিয়েছেন।

৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে যখন ইডি আধিকারিকেরা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে যান, কয়েকশো মানুষ সে দিন চড়াও হয়েছিলেন ইডির তদন্তকারী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উপরে। সে দিন থেকেই ‘আড়ালে’ শাহজাহান।

সম্প্রতি ইডি আধিকারিকেরা বড় বাহিনী নিয়ে ফের সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালান। ২৯ তারিখ হাজিরার নির্দেশ দিয়ে নোটিস লাগিয়ে দেন বাড়ির দেওয়ালে। সেই হিসেবে এ দিন জামিনের আর্জির প্রস্তুতি হিসাবে হলফনামায় সই তাৎপর্যপূর্ণ। সূত্রের খবর, তিন দিন আগে থেকেই এই প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি।

এরই মধ্যে সোমবার সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ড হারবারে এক অনুষ্ঠানে অভিষেক বলেন, ‘‘(সল্টলেক থেকে সন্দেশখালি) তিন ঘণ্টার রাস্তা। ইডির সঙ্গে সংবাদমাধ্যম পৌঁছে যাচ্ছে!’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে যেতে পারছেন আর স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে পারছেন না! তা হলে ইডির উদ্দেশ্যটা কী?’’ তল্লাশিতে যাওয়া ইডির অফিসারদের উপর হামলার ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু একই সঙ্গে বলেন, ‘‘কারা হামলা করেছে, সেটা তদন্তের বিষয়। ইডি-ও অভিযোগ জানিয়েছে। যা দেখা গিয়েছে, তাতে শাহজাহানকে দেখিনি। আমি তো গণৎকার নই। কে ছিল বলতে পারব না।’’ সেই সূত্রেই অভিষেক বলেন, ‘‘যাঁরা পাপ করবেন, আজ না হয় কাল, তাঁরা শাস্তি পাবেনই।’’ সম্প্রতি মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও সন্দেশখালির ঘটনার নিন্দা করেন।

সোমবার শাহজাহানের গতিবিধি কী ছিল, তা নিয়ে দিনভর কিছুই বলতে চাননি তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। শাহজাহান যখন বিচার ভবনে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন, তখন তাঁর ভাই শেখ আলমগির উল্টে বলেন, ‘‘কেন দাদা ইডির দফতরে হাজিরা দিলেন না, কোথায় আছেন, কবে যাবেন, কী করবেন— কিছুই জানি না। কোনও যোগাযোগ নেই দাদার সঙ্গে।’’

সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোও বলেন, ‘‘শাহজাহান কী করবেন, আগে তা অনুমান করে বলেছিলাম। আর অনুমান করে কিছু বলব না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শাহজাহান পরিণত রাজনীতিক। হয়তো তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করছেন।’’

তদন্তকারীদের দাবি, ইডির তরফে শাহজাহানের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিস জারি করা হয়েছে। ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং’-এর ধারায় তদন্তের অগ্রগতি হচ্ছে। রাজ্য পুলিশ ও সিবিআই আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত সিট যদি শাহজাহানকে গ্রেফতার করে, তা হলে তার পরে তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করবে ইডি। গত বুধবার তল্লাশিতে শাহজাহানের বাড়ি থেকে ২০১৮ সালে তাঁর আয়কর রিটার্নের নথি পাওয়া গিয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে আয়কর দফতরের সঙ্গে। তদন্তকারীদের দাবি, শাহজাহান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে। ওই নথি ও প্যান কার্ডের নম্বর অনুযায়ী সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.