রাজ্য জুড়ে বাড়ছে অ্যাডিনো ভাইরাসের আতঙ্ক। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হওয়া শিশুদের মৃত্যুতে পিছনে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে, না অন্য কোনও কারণে মৃত্যু হচ্ছে তা-ও খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর। যদিও কলকাতায় শিশু মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের দাবি, বেশির ভাগ শিশুই মারা যাচ্ছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে। আবার অনেকের ভাইরাল জ্বরের কারণেও মৃত্যু হয়েছে। সবাই অ্যাডিনোভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে না বলেই দাবি দেবাশিসের।
শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত রাজ্যে ১৩ জনেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে রাজ্য। এর মধ্যে মঙ্গলবার অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারকেলডাঙার বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছিল শিশুটি। দিন সাতেক আগেই ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে। মঙ্গলবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে মৃত্যু হয় তার।
কলকাতা ছাড়াও বাঁকুড়া জেলাতেও বেড়েছে অ্যাডিনোর আতঙ্ক। জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ-সহ অসুখে আক্রান্ত হয়ে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে দু’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে, অ্যাডিনো ভাইরাস আক্রান্ত হয়েই তাদের মৃত্যু হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন কর্তৃপক্ষ।
জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়ে গত এক সপ্তাহে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে পেডিয়াট্রিক বিভাগে ১৪১ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। যাদের মধ্যে এক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। তবে ওই দুই শিশু অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে কি না, তা নিয়ে খোলসা করে কিছু জানাননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা সন্দীপ সান্যাল জানিয়েছেন ‘‘জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।’’
এই পরিস্থিতিতে শিশু বিভাগে আউটডোরের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। বিকেল চারটে পর্যন্ত চিকিৎসকরা আউটডোরে পরিষেবা দেবেন বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে। এমনকি ২৪ ঘন্টা শিশু বিশেষজ্ঞদের ফোনের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার এ নিয়ে একটি বৈঠক করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। সেখানে শিশুদের চিকিৎসা নিয়ে একাধিক নির্দেশিকা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশিকা মেনেই শিশু বিভাগের দিকে বাড়তি নজর দিচ্ছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অ্যাডিনো ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে বর্তমানে কোচবিহার মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চার জন শিশু ভর্তি রয়েছে। তাদের নমুনা ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক মুক্তিসাধন মাইতি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেলায় ৩৪টি অ্যাডিনো আক্রান্ত শিশুর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে মঙ্গলবার পর্যন্ত। তারমধ্যে ১৭ জনকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৭ জন চিকিৎসাধীন। তবে শিশু মৃত্যুর কোনও ঘটনা ঘটেনি সরকার যা নির্দেশ দিয়েছে তা মেনেই কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
অন্য দিকে, হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচরণ মণ্ডল জানান, হাওড়া জেলায় এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনো প্রভাব নেই। কোনও শিশুকে অন্য কোনও হাসপাতালে রেফার করা হয়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।
একই দাবি করেছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ইউনুস খানও। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, যদি কোনও শিশুর মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায়, তা হলে তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
মালদা জেলাতেও এখনও পর্যন্ত অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনও শিশু অসুস্থ হয়নি বলে জানিয়েছেন সে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পাপড়ি নায়েক।
অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ যাতে জেলায় ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই ভাইরাসের সবচেয়ে বড় উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। এ বার সেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় কষ্ট পাওয়া শিশুদের জন্য ভেন্টিলেটর পরিষেবার ব্যাবস্থা করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে।
জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুশোভন রায় জানিয়েছেন, গড়ে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ শিশুকে দেখতে হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে এসেছে। তবে এখনও পর্যন্ত কারও মৃত্যু হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
এখনও পর্যন্ত জেলা হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে কোনও অ্যাডিনো ভাইরাস আক্রান্ত শিশু ভর্তি নেই বলে জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিকও। তিনি বলেন, ‘‘কিসের অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত? এমন কোন রিপোর্ট নেই।’’
পুরুলিয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুণালকান্তি দে জানিয়েছেন, সেই জেলাতেও আপাতত অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে অ্যাডিনোর উপসর্গ নিয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় অনেক শিশুই ভর্তি হয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। যদিও কারও মৃত্যু হয়নি।