ভারত এবং কানাডার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে নামার পরে সম্প্রতি কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল। সুর নরমের ইঙ্গিত দিয়েছিল কানাডাই। এই আবহে বিতর্কিত মন্তব্য করে সেই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুললেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। অটোয়া-নয়াদিল্লি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বললেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে। এমনকি জায়েদের সঙ্গে কী নিয়ে কথা হয়েছে, তা-ও তুলে ধরলেন নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে।
ট্রুডোর এ হেন কাজে তাঁর কূটনৈতিক রীতিনীতি সম্পর্কে জ্ঞানগম্যি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। ট্রুডোর পোস্টে ভারতের বিরুদ্ধে নয়া প্ররোচনা সৃষ্টি করারও ইঙ্গিত পাচ্ছেন কেউ কেউ। রবিবার এক্স হ্যান্ডলে ট্রুডো জানান, ভারত-কানাডা সম্পর্ক নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমিরশাহির প্রেসিডেন্টের ফোনে কথা হয়েছে। তার পরই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি লেখেন, “আইনের শাসনকে শ্রদ্ধা করা এবং তাকে গুরুত্বের সঙ্গে ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।” কানাডায় খলিস্তানি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আর্জির প্রেক্ষিতে বার বার এই ‘আইনের শাসন’, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র মতো লব্জ শোনা গিয়েছে ট্রুডোর গলায়। ভারতের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, খলিস্তানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে ট্রুডোর প্রশাসন। ইজ়রায়েলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আমিরশাহির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রুডো।
গত জুন মাসে খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ (কেটিএফ)-এর প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে গুরুদ্বার চত্বরের মধ্যেই গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনার তদন্তে ভারতের গুপ্তচর সংস্থার সম্ভাব্য ভূমিকা ছিল বলে কানাডার পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ করেছিলেন ট্রুডো। কানাডার তদন্তকারী সংস্থাগুলি এ বিষয়ে আরও বিশদে তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি। ট্রুডোর এই দাবিকে ‘অবাস্তব’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দেয় ভারত।
কানাডার কূটনীতিকদের একাংশকে দেশ ছাড়তে বলে অটোয়ার উপর কূটনৈতিক চাপ তৈরির কাজ জারি রাখে নয়াদিল্লি। তার পরই ট্রুডোকে বলতে শোনা যায় যে, ‘‘বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে ভারত আত্মপ্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত এখন উদীয়মান শক্তি। কানাডা চায় তাদের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে গত বছর আমাদের বৈঠকও হয়েছে।” ভারতের সঙ্গে ‘ঘরোয়া কূটনীতি’ চালানোর উপরে জোর দেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলিও। সেই আবহেই ট্রুডোর এই ‘প্ররোচনামূলক’ মন্তব্য নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক মহলে।