অভিজিৎকে এখন বিরক্ত নয়, তদন্তে স্থগিতাদেশ দিল হাই কোর্ট, ভোট মিটলে আবার শুনানি

একাধিক অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এফআইআর খারিজ চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই মামলায় তাঁকে রক্ষাকবচ দিল আদালত। হাই কোর্ট জানিয়েছে, ভোট না মেটা পর্যন্ত অভিজিৎকে বিরক্ত করা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও করতে পারবে না পুলিশ। তবে ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া তারা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আগামী ১২ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে হাই কোর্টে।

গত ৪ মে মনোনয়ন জমা দিতে যান তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ। সে দিন তমলুকের হাসপাতাল মোড়ে কিছু গোলমাল হয়েছিল। সেই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। যা খারিজের আবেদন নিয়ে হাই কোর্টে যান প্রাক্তন বিচারপতি। হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে সেই মামলার শুনানি হয়েছে। বিচারপতি জানিয়েছেন, যে হেতু মামলাকারী নির্বাচনের প্রার্থী, তাই তাঁর বিরুদ্ধে ১৪ জুন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও তদন্তও করা যাবে না। তদন্ত প্রক্রিয়াতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন, অর্থাৎ ১২ জুন পুলিশকে আদালতে কেস ডায়েরি জমা করতে হবে। এ ছাড়া, ১৪ জুনের মধ্যে দু’পক্ষকে হলফনামা জমা দিতে বলেছে আদালত।

প্রাক্তন বিচারপতির হয়ে আদালতে এই মামলার সওয়াল করেন আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘অভিজিতের বিরুদ্ধে করা এফআইআরে বলা হয়েছে, অনুমতি ছাড়া বেআইনি ভাবে তিনি মিছিল করেছিলেন। এই দাবি সঠিক নয়। নির্বাচন কমিশনের ‘সুবিধা অ্যাপে’ মিছিল করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কমিশন ওই অনুমতি দিয়েছিল বিজেপি প্রার্থীকে।’’

অভিজিতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ, তিনি এক প্রাথমিক শিক্ষককে চাকরি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিয়েছেন। আইনজীবীর বক্তব্য, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। কারণ প্রাক্তন বিচারপতির এমন কোনও ক্ষমতাই নেই। ইচ্ছাকৃত ভাবে এই অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আইনজীবী।

অভিজিতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত। তাঁর সওয়াল, ‘‘মামলাকারী মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় কোনও একটি ঘটনা যে ঘটেছে, তা স্পষ্ট। কারণ, কিছু ঘটেনি বলে মামলাকারী দাবি করছেন না। অর্থাৎ, অভিজিৎ নিজেও ঘটনার কথা স্বীকার করছেন। তিনি শুধু ঘটনার অন্য রূপ বলছেন। ফলে কেউ অভিযোগ করলে এফআইআর দায়ের করে সেই ঘটনার তদন্ত করা পুলিশের দায়িত্ব। অসত্য তথ্য দিয়ে অভিযোগ করলেও তার তদন্ত পুলিশের করা উচিত।’’

এর পরই আদালতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মামলার উদাহরণ টানেন বিচারপতি ঘোষ। এজির উদ্দেশে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘কেজরীওয়ালের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কি দেখেছেন? শীর্ষ আদালতের ওই নির্দেশ মোতাবেক বলছি, এই সময়ে কোনও প্রার্থীকে এই ধরনের অভিযোগে বিরক্ত না করাই ভাল।’’ পাশাপাশি বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, অভিযোগের বাংলা লেখার ধরন বেশ খারাপ।

এজি তদন্তে স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করে আরও বলেন, ‘‘আপাতত মামলাকারীকে রক্ষাকবচ দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ কেন? তদন্ত এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পুলিশকে তার মতো করে তদন্ত করতে দেওয়া উচিত।’’ তাঁর বক্তব্যের পাল্টা দিয়ে বিচারপতি ঘোষের মন্তব্য, ‘‘এটা কোনও দুর্নীতির মামলা নয়! এই এফআইআর দায়ের নিয়ে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। তাই স্থগিতাদেশে আপত্তি থাকলে এফআইআরের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও দেখবে আদালত। কারণ, যিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। অভিযোগকারী তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তাই আপাতত এই তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।’’

অভিজিতের সঙ্গে এফআইআর খারিজের আবেদন করেছিলেন বিজেপি নেতা প্রশান্ত দাসও। বৃহস্পতিবার তাঁকেও রক্ষাকবচ দিয়েছে আদালত। উল্লেখ্য, তমলুকে ষষ্ঠ দফায় আগামী ২৫ মে ভোটগ্রহণ রয়েছে। ভোটের ফল জানা যাবে ৪ জুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.