অহংকার ত্যাগই রামত্ব, ত্ৰিদিবসীয় ‘অহম রামঃঅস্মি’-মেঁ রাম হুঁ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বলেছেন ড. কৃষ্ণগোপাল

অহংকার ত্যাগই রামত্ব। রাম ঐশ্বরিক শক্তির সাথে আবির্ভাব হয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে জয়ের খ্যাতি নিজে নেওয়ার বদলে সহযোগীদের কৃতিত্ব দিয়েছেন। অসফল হওয়ার দায় নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া তথা জয়ের অংশীদার সহযোগীকে দেওয়াই রামত্ব। কলকাতায় ৩৪-তম সামাজিক যৌথ তত্ত্বাবধানে আয়োজিত ‘অহম রামঃঅস্মি’ – মেঁ রাম হুঁ’ প্রবোধনমালার তিন দিবসীয় প্রবচন শৃঙ্খলার সমাপ্তি সমারোহে বক্তব্য পেশ করেতে গিয়ে এ-কথা বলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সহ-সরকার্যবাহ তথা প্রখর চিন্তাবিদ ড. কৃষ্ণগোপাল। 
কৃষ্ণগোপাল বলেন, রামত্ব সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের রামের জীবন, আচরণ, ব্যবহার এবং পরিবার দেখতে হবে। নিজের অহংকারকে নিয়ন্ত্রণ রেখে অন্যের মন বুঝতে হবে, আমি – এই মনোভাব দূর করাই হল রামত্ব। 
ড. কৃষ্ণগোপালের কথায়, সামান্য জীবনে অস্বাভাবিক জীবনের প্রকাশকেই রামত্ব বলা হয়ে থাকে। কোথাও অত্যাচার হচ্ছে দেখে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার নাম রামত্ব। নিজে সক্ষম, তবুও অন্যের চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দেওয়াকেই বলে রামত্ব। ভুল ক্ষমা করে তাকে নিজের করে নেওয়াই হল রামত্ব। রাম তাঁর আচরণে জনগণের দিকনির্দেশ করেছেন। রাম কোনও গ্রন্থ লেখেননি। কোনও উপদেশ দেননি। রাম এবং রামকথার প্রতিটি চরিত্র তাঁদের নিজস্ব আচরণ দ্বারা রামত্বের সঠিক সংজ্ঞা স্থাপন করেছে। 
তিনি বলেন, ভগবান রামের চরিত্রটি এমন একটি আদর্শ যা আমরা প্রতিটি সময়েই ব্যবহারিক বলে মনে করি। সঙ্কটের সময় ধৈর্য ত্যাগ না করে, রাম তাঁর আচরণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। রামের চরিত্র অনুযায়ী জীবনযাপন একটি বড় সুক্ষ্ম প্রশ্ন। রামের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা আমাদের জীবন আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছে এবং তা অনুসরণ করতে শিখিয়েছে। রামের সরলতা, স্বাভাবিকতা, ধৈর্য, শুভকামনা জীবনকে হতাশার বাইরে আসতে অনুপ্রাণিত করে। গুরুতর দুর্যোগেও তিনি আমাদের অধৈর্য হতে দেন না। 
ড. কৃষ্ণগোপালের কথায়, যিনি নিখুঁত, কখনও বিচলিত হন না তিনিই হলেন রাম। রামের জীবনদক্ষতা হল নিজের দেশ ও সমাজকে যুদ্ধে ঠেলে না দিয়ে জয়লাভ করা। রামের জীবন শিক্ষা দেয়, আমাদের উদার মন নিয়ে কথা বলা উচিত। রাম একজন মহান মানুষ, কারণ তিনি ক্ষুদ্রতমকেও মহানতা দান করেন। রামত্ব যদি আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকে তবে আমরা ক্ষমা করতেও শিখে যাব। রামের রামত্ব শূন্যের উপর ব্রহ্মাণ্ডকে দাঁড় করাতে সক্ষম। পুরুষার্থী রাম হতাশায় আশার সঞ্চার করেন। রামকে দেখার জন্য তাঁর আচরণ অবশ্যই লক্ষ্য করা উচিত। 
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বনবাসী কল্যাণ আশ্রম, শ্রীবড়বাজার কুমারসভা পুস্তকালয়, রাজস্থান পরিষদ, বনবন্ধু পরিষদ, ভারতীয় সংস্কৃতি প্রচার সমিতি, কলকাতা পিঞ্জরাপল সোসাইটি, রাম শরদ কোঠারি স্মৃতি সংঘ-এর সাথে কলকাতার ৩৪টি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এই তিনদিবসীয় অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষ ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেছেন স্নেহলতা বৈদ। এছাড়া আয়োজকদের মধ্যে শংকরলাল আগরওয়ালা, জিতেন্দ্র চৌধুরী, ডা. প্রেমশংকর ত্রিপাঠি, মহাবীর বাজাজ, রাজেশ আগরওয়ালা, অরুণপ্রকাশ মল্লাবত, রমেশ সরাবগী এবং অন্য কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.