চার ম্যাচে একটি জয়, হারের হ্যাটট্রিকের সামনে কোহলিরা, কোথায় সমস্যা? খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন

২০০৮ থেকে ২০২৪, আইপিএলে ১৬ বছর ধরে খেলছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এখনও পর্যন্ত এক বারও ট্রফি জিততে পারেনি। প্রথম চারটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই হেরে গিয়েছে আরসিবি। যে দলে বিরাট কোহলি, ফ্যাফ ডুপ্লেসি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ক্যামেরন গ্রিনের মতো ক্রিকেটার রয়েছেন, সেই দল হারে কী করে? কোথায় সমস্যা হচ্ছে আরসিবি-র?

আইপিএল শুরুর আগে আরসিবি দলে নেয় গ্রিনকে। গুজরাত টাইটান্স থেকে যখন হার্দিক পাণ্ড্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে যোগ দেন, সেই সময় মুম্বই থেকে বেঙ্গালুরু চলে আসেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার। মনে করা হয়েছিল বিরাট, ডুপ্লেসি, ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে গ্রিন যোগ দেওয়ায় আরসিবি দলে ভারসাম্য তৈরি হবে। ফলাফলে যদিও তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। উল্টে আরসিবি-র গলার কাঁটা এখন গ্রিন। না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলতে। চার ম্যাচে গ্রিনের মতো অলরাউন্ডার করেছেন ৬৩ রান এবং নিয়েছেন দু’টি উইকেট। অর্থাৎ ব্যাটে, বলে দলকে কোনও সাহায্যই করতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার। কিন্তু সাড়ে ১৭ কোটি টাকা খরচ করে তাঁকে দলে নিয়েছে আরসিবি।

ইংল্যান্ডের প্রাক্তন পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড মনে করেন গ্রিনকে বসিয়ে দেওয়া উচিত। এ বারের আইপিএলে এক সম্প্রচারকারী চ্যানেলে বিশেষজ্ঞ হিসাবে যোগ দিয়েছেন ব্রড। সেখানে ইংরেজ পেসার বলেন, “আমার মনে হয় আরসিবি দলে দু’জন বিদেশি বোলার প্রয়োজন। ওদের বোলিং তেমন শক্তিশালী নয়। গ্রিনকে বসিয়ে রিচি টপলে এবং লকি ফার্গুসনকে একসঙ্গে খেলানো উচিত। সেই সঙ্গে ডুপ্লেসি এবং ম্যাক্সওয়েল বাকি দুই বিদেশি। তাতে বোলিং শক্তিশালী হবে। দলের এমন একটা বোলিং আক্রমণ প্রয়োজন, যা ম্যাচ জেতাবে।” তবে ব্রড এটা মেনে নিয়েছেন যে, এত দাম দিয়ে এক জন ক্রিকেটারকে কিনে, তাঁকে বসিয়ে রাখা খুব সহজ নয়। এমন কঠিন সিদ্ধান্ত ডুপ্লেসি নিতে পারবেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্রড।

ইংরেজ পেসার দু’জন বিদেশি পেসার এনে আরসিবি-কে শক্তিশালী করার কথা বললেও বিরাটদের দলের আসল সমস্যা স্পিন বোলিং। বেঙ্গালুরু দলে স্পিনার বলতে রয়েছেন কর্ণ শর্মা, মায়াঙ্ক ডগর, হিমাংশু শর্মা এবং মহীপাল লোমরোর। বিদেশিদের মধ্যে এক মাত্র স্পিন বল করতে পারেন ম্যাক্সওয়েল। ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে কেউই তেমন নাম করা নন। অভিজ্ঞ স্পিনার বলতে কর্ণ। বাকিরা তেমন পরীক্ষিত নন। গত বছর আরসিবি-র হয়ে খেলেছিলেন ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গের মতো বিশ্বমানের স্পিনার। তার আগে যুজবেন্দ্র চহাল ছিলেন দলে। কিন্তু এই সব স্পিনারকে ছেড়ে দেয় আরসিবি। তার বদলে সেই মানের কোনও স্পিনারকে দলে নিতে পারেনি তারা। সেই অভাব দেখা যাচ্ছে এ বারের আইপিএলে।

বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও একমত। তিনি বললেন, “আইপিএল ভারতের মাটিতে খেলা হচ্ছে। যে মাঠেই খেলা হোক আর কিছু দিন পর পিচ ভাঙবে। তখন স্পিনারদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যাবে। সেই জায়গায় বিরাটেরা সমস্যায় পড়বে। শুধু পেসারদের দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না।”

আঙুল উঠছে আরসিবি-র বোলিং নিয়ে। তবে কি দলে ব্যাটিং নিয়ে কোনও সমস্যা নেই? এখনও পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলেছেন বিরাটেরা। প্রথম ম্যাচে ২০ ওভারে ১৭৩ রান তোলেন চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে। পরের ম্যাচে পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে বিরাটেরা করেন ১৭৮ রান। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ১৮২ রান করেছিলেন তাঁরা। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে বিরাটেরা করেছিলেন ১৫৩ রান। এর মধ্যে পঞ্জাব ছাড়া বাকি সব ম্যাচেই হেরে যায় আরসিবি। প্রথম তিনটি ম্যাচে আগে ব্যাট করেছিলেন বিরাটেরা। তাই দোষ দেওয়াই যায় বোলারদের ঘাড়ে। যত রানই তোলা হোক, বোলারেরা ম্যাচ জেতাতে পারেন না। কিন্তু লখনউ ম্যাচে তো বিরাটদের সামনে ছিল ১৮২ রানের লক্ষ্য। সেটাও তুলতে পারেনি আরসিবি।

rcb bowlers

প্রাক্তন ক্রিকেটার অম্বাতি রায়ডু শুধু বোলারদের দোষ দিতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, আরসিবি-র কোনও ক্রিকেটার ম্যাচ জেতাতে পারে না। রায়ডু বলেন, “আরসিবি-র বোলারের প্রচুর রান দিয়ে দেয় আর ব্যাটারেরা দরকারের সময় রান করে পারে না। দল যখন চাপে, তখন তরুণ ব্যাটারেরা ক্রিজ়ে। কারণ অভিজ্ঞ ব্যাটারেরা আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন। এটা এখনের সমস্যা নয়, গত ১৬ বছর ধরে এটাই হয়। দল চাপে পড়লে কোনও বড় ক্রিকেটার খেলতে পারে না। সেই কারণেই ওরা কখনও ট্রফি জিততে পারেনি।”

আরসিবি-র ব্যাটিং বিভাগে সামলানোর জন্য রয়েছেন বিরাট। ৪ ম্যাচে যিনি ২০৩ রান করেছেন। কমলা টুপি এখন তাঁর দখলে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে ব্যাট করতে নামা ডুপ্লেসি ৪ ম্যাচে করেছেন ৬৫ রান। রান নেই ম্যাক্সওয়েল (৩১), অনুজ রাওয়াত (৭৩), গ্রিন (৬৩), দীনেশ কার্তিকদের (৯০) ব্যাটেও। তাঁরা প্রত্যেকেই চারটি করে ম্যাচ খেলেছেন। চার ম্যাচ খেলে বিরাট ছাড়া আরসিবি-র কোনও ব্যাটার ১০০ রানের গণ্ডি পার করতে পারেননি। বিরাট দু’টি অর্ধশতরান করেছেন। বাকিদের কেউই এখনও অর্ধশতরান করতে পারেননি। অর্থাৎ এ বারের আইপিএলে বোলিং যেমন ভোগাচ্ছে আরসিবি-কে, তেমনই চিন্তার কারণ বিরাটের সঙ্গী না পাওয়া। তাঁর উল্টো দিকে যাঁরা ব্যাট করছেন, তাঁদের কেউই ক্রিজ়ে টিকতে পারছেন না। ফলে বিরাটের পক্ষেও সব সময় ঝোড়ো ইনিংস খেলা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর স্ট্রাইক রেট কমছে। বিরাট পুরো ২০ ওভার ব্যাট করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে দল জিতছে না।

picture of IPL 2024 Point Table

আগামী দিনে দলে ভারসাম্য আনতেই হবে আরসিবি-কে। সেটার জন্য যদি গ্রিনের মতো কোনও ক্রিকেটারকে বসিয়ে দিতে হয়, তাহলে তা-ই করতে হবে। এমনকি ডুপ্লেসি রান না পেলে খেলানো যেতে পারে উইল জ্যাক্সকে। ইংরেজ ওপেনার স্পিনটাও করতে পারেন। তাতে কিছুটা সুবিধা হতে পারে আরসিবি-র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.