খোদ কলকাতায় এ এক অনন্য কলাবন। চওড়ায় বড়জোর ফুট ১৮। দৈর্ঘ্যে অন্তত এক কিলোমিটার। প্রায় প্রতিটি গাছে কলার কাঁদি। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে। অথচ লোকচক্ষুর অন্তরালে। নির্জন, অসম্ভব নিরিবিলি।
এই কলাবনে যাওয়ার মূল প্রবেশপথ ফরটিস হাসপাতালের সদর ফটকের ঠিক বিপরীতে। অনুমতি ছাড়া সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আর একটি অপরিসর হাঁটাপথ আছে কসবা শিল্পতালুকের পাশ দিয়ে। এই কলাবন আসলে পূর্ব কলকাতার জলাভূমির একটি সীমানা। রবিবার প্রেস ক্লাব কলকাতার তরফে চড়ুইভাতির সুবাদে ভিতরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। গোটা তল্লাটের অআকখ দেখতে সরেজমিনে বার হয়ে আবিষ্কার করলাম ওই অনন্য কলাবন।
কলাবনের গা ঘেঁষে ময়লা জলের খাল। খালের ওপাশে সারিবদ্ধ ঝুপড়ি। আর কলাবনের উত্তরে বিস্তীর্ণ জলাভূমি। দূরে আকাশ যেন মিশে গিয়েছে জল বা দিকচক্রবালে। দূরে মাঝে মাঝে উঁকি মারছে বহুতল। জলাভূমির এই অংশ দেখভালের দায়িত্বে পূর্ব কলকাতা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।
এত কলা কারা নেন? সমিতির সম্পাদক ধর্ম বারিক উত্তরে জানান, আমরা আসলে ওই কলাবন ইজারা দিয়েছি। কলাবন করার উদ্দেশ্য দখলদারদের থেকে
জলাভূমির সীমানা বাঁচানো। সংলগ্ন খালের ওপাশটা দখল হয়ে গিয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে ময়লা জলের খালে। এই জল বিজ্ঞানসম্মতভাবে মাছ ও সবজি চাষে লাগানো হয়। এপাশটাও যাতে দখল না হয়ে যায়, সেটা লক্ষ্য রাখতে হয়।
দিগন্ত বিস্তৃত ওই প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ পূর্ব কলকাতার জলাভূমি প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট একটি অঞ্চল।কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট ১২৫ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ব্যাপ্ত এই সুবৃহৎ জলাভূমিতে লবণাক্ত জলের বিল, নোনা জমির পাশাপাশি নিকাশি ফার্ম ও স্থায়ী পুকুরও রয়েছে। এই জলাভূমি কলকাতার নিকাশিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্জ্য জল দ্বারা পুষ্ট হয়ে মাছ ও অন্যান্য শাকসবজির চাষ করা হয় এখানে। ২০০২ সালের ১৯ অগস্ট রামসার কনভেনশন অনুসারে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি “আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমি” হিসেবে ঘোষিত হয়।
চড়ুইভাতির জন্য এখানে জায়গা ভাড়া দেয় পূর্ব কলকাতা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। একটি দ্বিতল বাড়ির ভাড়া ৮ হাজার টাকা। অন্য জায়গাগুলোর ভাড়া ৪ হাজার টাকা। চড়ুইভাতির মোট ১৫টি জায়গা আছে ওখানে। গাছের গায়ে বিজ্ঞপ্তি লাগানো ‘পাখির আবাস’। কিন্তু গাঁক গাঁক করে মাইক বাজছে। এই আওয়াজে পাখি থাকবে? সমিতির সম্পাদক ধর্ম বারিক উত্তরে জানান, “চড়ুইভাতি তো বিকেলেই শেষ হরে যাবে! সন্ধ্যায় পাখিতে ভরে যাবে চারদিক! এত পাখি, ভাবতে পারবেন না!”