বুকের যেখানে হৃৎপিণ্ড রয়েছে, সেখানে সজোরে একটি ঘুষি মারা হয়েছিল! তাতেই মৃত্যু হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধী বলে পরিচিত আলেক্সেই নাভালনির। এমনটাই দাবি করলেন রাশিয়ার এক মানবাধিকার কর্মী। তিনি জানালেন পূর্বতন সোভিয়েত রাশিয়ার গুপ্তচর বাহিনী কেজিবির সদস্যেরা এ ভাবেই ‘শত্রু’দের খুন করতেন। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে রাশিয়ার আর্কটিক পেনাল কলোনিতে মৃত্যু হয়েছিল নাভালনির। এখনও তাঁর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয়নি প্রশাসন।
মানবাধিকার সংগঠন গুলাগু ডট নেটের প্রতিষ্ঠাতা ভ্লাদিমির ওশেচকিন একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘কেজিবির বিশেষ বাহিনীর এটা অনেক পুরনো পন্থা।’’ তাঁর দাবি, এ ভাবে অতীতে বহু জনকে খুন করা হয়েছে। ঠিক কী ভাবে খুন করা হয়, তা বিশদে জানিয়েছেন ভ্লাদিমির। তাঁর কথায়, ‘‘কেজিবির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত, কী ভাবে বুকে একটা মাত্র ঘুষি মেরে খুন করতে হয়। এটা কেজিবির হলমার্ক।’’
সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে পড়েনি, তখন ত্রাস জাগাত গুপ্তচর বাহিনী কেজিবি। ১৯৯১ সালের ৩ ডিসেম্বর এই বাহিনী রদ করা হয়। পরে তা ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস এবং ফেডেরাল সিকিউরিটি সার্ভিসে পরিণত হয়। ওশেচকিন মনে করছেন, প্রথমে তীব্র শীতে দীর্ঘ ক্ষণ ৪৭ বছরের নাভালনিকে বাইরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। এতে তাঁর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। রক্ত চলাচল কমতে থাকে। এই অবস্থায় তাঁর বুকে ঘুষি মারা হয়েছিল। ওশেচকিনের দাবি, এই অবস্থায় কয়েক সেকেন্ডে মৃত্যু হতে পারে কোনও ব্যক্তির। কেজিবির সদস্যেরা অতীতে এ ভাবে বহু মানুষকে খুন করেছেন বলেও তাঁর দাবি।
একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, নাভালনির শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, রাশিয়ার জেলে যাঁদের মৃত্যু হয়, তাঁদের ফরেন মেডিসিন ব্যুরোতে পাঠানো হয়। কিন্তু নাভালনির দেহ ক্লিনিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। নাভালনির দলের তরফে জানানো হয়েছে, পুতিন সরকার তাঁর মাকে জানিয়েছেন, লোকজন ছাড়াই শেষকৃত্য করতে হবে নাভালনির। নয়তো দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। জেলেই সমাধিস্থ করা হবে তাঁকে। নাভালনির মাকে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানানো হয়, ১৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুর ২টো ১৭ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে ‘আচমকাই মৃত্যু’, যার অর্থ, হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যু। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালেও নাভালনিকে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। আঙুল উঠেছিল পুতিনের দিকে। যদিও নাভালনির মৃত্যু নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি পুতিন।