এক হাতে চার বছরের পুত্রের চপ্পল, অন্য হাতে একটি রড। আর সেই রডটিই জল উপচে পড়া ড্রেনগুলিতে ডুবিয়ে ডুবিয়ে খুঁজেই চলেছেন সন্তানকে। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। জলও বাড়ছে। কিন্তু সেই দুর্যোগেও দিশাহারা হয়ে সন্তানকে খুঁজে চলেছেন অসহায় বাবা। বার বার সন্তানের উদ্দেশে বিলাপ করে চলেছেন, “তোকে না পাওয়া পর্যন্ত আমি থামব না! বাড়িও ফিরব না।” এমনই এক করুণ দৃশ্য ধরা পড়েছে অসমের গুয়াহাটিতে।
পুত্র অবিনাশকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন হীরালাল। স্কুটারের পিছনে বসেছিল অবিনাশ। অসমে বন্যা পরিস্থিতির কারণে কোথাও কোমরসমান, কোথাও গলাসমান জল। পুত্র অবিনাশকে নিয়ে যে রাস্তা ধরে হীরালাল ফিরছিলেন, সেই রাস্তাও ছিল জলমগ্ন। আচমকাই স্কুটারটি একটি ঝাঁকুনি খায়, আর বাবার পিছনে বসে থাকা অবিনাশের হাত ফস্কে যায়। সোজা গিয়ে পড়ে একটি বড় খোলা নালার মধ্যে।
পুত্র পড়ে যেতেই হীরালালও স্কুটার ফেলে তাকে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি। জলের টানে চোখের নিমেষে ভেসে যায় চার বছরের শিশুটি। কাঁদতে কাঁদতে হীরালাল বলছিলেন, “ছেলে পড়ে যেতেই আমিও লাফ মেরে ওকে ধরার চেষ্টা করি। ওর হাতটা দেখতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু ধরতে পারলাম না।” পুত্রের চপ্পল আর একটা রড নিয়ে নালাগুলিতে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখেন, কোথাও আটকে নেই তো সে! সারা রাত ধরে একের পর এক নালা খুঁজে বেরিয়েছেন হীরালাল। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাননি অবিনাশকে। শেষে ভেজা গায়ে একটি দোকানের বারান্দাতেই কাটিয়ে দেন ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায়। বাড়িতেও খবরটা পৌঁছে গিয়েছিল। খবর যায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছেও এ খবর পৌঁছয়। তিনি তড়িঘড়ি ওই শিশুকে খোঁজার নির্দেশ দেন। স্নিফার ডগ, সুপার সাকার, এক্সক্যাভেটর এবং উদ্ধারকারী দলকে শিশুটির খোঁজে মোতায়েন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে হীরালাল এবং তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস দিয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় অসমের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে আরও আরও ছ’জনের মৃত্যু হওয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫২। রাজ্যের ৩০টি জেলা বন্যাকবলিত। ২৪ লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত।