বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসচর্চায় নিমগ্ন এক বাঙালি ঐতিহাসিক

ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার (১০ ই ডিসেম্বর, ১৮৭০ নাটোর, রাজশাহী — ১৯ শে মে, ১৯৫৮ কলকাতা)-এর আজ জন্মবার্ষিকী। কোনো ইজম্ প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিহাস চর্চা তিনি করেন নি, মিথ্যা ইতিহাস মানুষের উপর চাপিয়েও দেন নি৷ যা সত্য, তা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেই ইতিহাসের পাতা লিখেছেন। তাই যদুনাথের ইতিহাস বই খুললে সত্যের দুয়ারও খুলে যায়। সেই সময় আরও কয়েকজন বাঙালিকে সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস চর্চা করতেই দেখা গেছে। রমেশচন্দ্র মজুমদার, যদুনাথ সরকার তাদেরই অন্যতম।

পড়াশোনায় পারিবারিক আবহ ও উৎসাহ ছিল, বাড়িতেই বইয়ের যোগান ছিল, আপন মেধার অনবদ্যতাও ছিল। তাই তিনি এগিয়ে ছিলেন। আরও এগিয়ে দিয়েছিল তাঁর জানা ও পড়ার অফুরন্ত প্রয়াস ও পাঠ। প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ স্কলারশিপ পান তিনি (১৮৯৭)। অধ্যাপনা করেন প্রেসিডেন্সী কলেজ, পাটনা কলেজ, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি প্রথম অধ্যাপক-উপাচার্য। তাঁর আগে উপাচার্য পদে অন্য পেশা থেকে বিদগ্ধ, সম্মানিত মানুষ এসেছেন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়িয়ে উপাচার্যে উন্নীত হবার প্রথম উদাহরণ তিনি। তিনি ছিলেন রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানিত সদস্য। নাইট উপাধি লাভ করেছিলেন। ঢাকা ও পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডিলিট ডিগ্রি পেয়েছিলেন। রবীন্দ্র সাহিত্যের নিবিড় পাঠ ছিল। রবীন্দ্র সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদ করতেও তাঁকে দেখা গেছে। শিবাজির ইতিহাস নিয়ে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন তিনি৷ তাঁরই দৌলতে আমরা শিবাজিকে পুনরায় মহিমান্বিত হতে দেখলাম প্রবুদ্ধজনের মধ্যে। নইলে মোঘল সম্রাটদের যাবতীয় ইতিহাস দিয়ে ভারতীয় সত্য ইতিহাসকে পুরোপুরি চেপে ফেলা হত, যেমনটা আজও অনেক ইতিহাসবিদদের মধ্যে রয়ে গেছে ভেতরে-বাইরে। ইতিহাস গবেষণায় তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সফল প্রয়োগ করেছিলেন বলেই এইরকম ব্যতিক্রমী হতে পেরেছিলেন। তাই তো ইতিহাসের ঋত-সত্য গবেষণালব্ধ ফল হিসাবে উঠে এলো বইয়ের পাতায়। জন্মদিনে অন্তরের শ্রদ্ধা জানাই।

অরিত্র ঘোষ দস্তিদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.