৬৫ কোটির বসতবাড়ি, সঙ্গে বিশাল খামারবাড়ি, ঋষি সেই উজির যিনি রাজার চেয়েও ধনী

রাজার ঘরে যে সম্পদ, উজিরের কাছে তার দ্বিগুণ! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক তেমনই এক উজির। ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সম্পত্তির পরিমাণ সস্ত্রিক ঋষির একেবারেই অর্ধেক! তাঁর সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে একটি সাক্ষাৎকারে ঋষি জানিয়েছিলেন, পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আর তিনি কঠোর পরিশ্রমী। কিন্তু এত যে সমালোচনা? গত অগস্টে সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করেন। যা পেয়েছেন, যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছেন, এমনটা ছিলেন না। হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিত্তবান হয়ে জন্মাইনি।’’ পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, আমাদের দেশে কাউকে তাঁর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স নয়, কাজ এবং চরিত্র দিয়ে বিচার করা উচিত।’’

সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩৭ কোটি পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩,৪০০ কোটি টাকা। অন্য দিকে, ঋষি ও তাঁর স্ত্রী অক্ষতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৩ কোটি পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৬,৮০০ কোটি টাকারও বেশি। বস্তুত, ব্রিটেনের ২৫০ জন ধনী ব্যক্তি বা পরিবারের তালিকাতেও রয়েছে ঋষিদের নাম। অন্য একটি সূত্র বলছে, তাঁদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬,৬১৭ কোটি টাকা।

ব্রিটেনের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে অহরহ খোঁজ চলছে সার্চ ইঞ্জিনে। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছাত্রাবস্থায় ছুটির দিনে কাজ করতেন ঋষি সুনক। কখনও সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি প্রেসক্রিপশন দেওয়া, কখনও সাউদাম্পটনের হোটেলে ওয়েটারের কাজ করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি বদলায়। বদলেছে পরিশ্রমী এবং মেধাবী ঋষির আর্থিক পরিস্থিতিও। ছাত্রাবস্থায় যিনি সিগারেট খাওয়ার মতো কোনও ‘বাজে খরচের নেশা’য় জড়াতে চাননি, তিনিই এখন ব্রিটেনের বিত্তবানদের মধ্যে অন্যতম। ঠিক কত সম্পদের মালিক ঋষি, সে তথ্য জানতেও উৎসুক নেটাগরিকরা। ভাল হোক বা খারাপ, তাঁকে নিয়ে যাবতীয় চর্চা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ঋষি।

ঋষি এবং তাঁর পরিবারের এই বিপুল সম্পত্তির উৎস কী? তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ব্যবসা এবং হেজ় ফান্ড (বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের একটি সীমিত অংশীদারিত্বের ব্যবসা)। ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে হিসাবে ঋষির স্ত্রী ব্যবসার লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, অতিমারি কালে বেঙ্গালুরুর আইটি কোম্পানি ইনফোসিসের শেয়ারের দর বেড়ে যাওয়ায় ঋষির স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি পাউন্ড বৃদ্ধি পায়। মরিশাসেও সস্ত্রীক ঋষির বেশ কিছু বিনিয়োগ রয়েছে।

অন্য দিকে, রাজা তৃতীয় চার্লসের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ কম হলেও রাজপরিবারের বিপুল সম্পত্তিতে তাঁর অংশ রয়েছে। সেই সম্পদের পরিমাণ যদিও অজানা। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, চতুর্দশ শতক থেকে রাজপরিবারের মালিকানাধীন ল্যাঙ্কাস্টারের সম্পদের পরিমাণ ধরলে রাজা চার্লসের সম্পদ অনেক বেশি। সম্প্রতি যদিও রাজা তাঁর বড় ছেলেকে প্রচুর সম্পত্তি হস্তান্তরিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশকে গভীর আর্থিক সমস্যা থেকে বার করা তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন ঋষি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশের আর্থিক মন্দা এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ করার। যদিও ঋষির সম্পত্তি নিয়ে ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার লেখালেখি হয়েছে। একটি সংবাদমাধ্যম তো কটাক্ষ করে শিরোনামই করেছিল ‘ঋষি রিচ’ (কার্টুন সিরিজ ‘রিচি রিচ’-এর অনুকরণে)। সেই প্রতিবেদনে ঋষি ও তাঁর ফ্যাশন ডিজ়াইনার স্ত্রী-র বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। ৪,৩০০ হাজার পাউন্ডের স্যুটের প্রতি ঋষির আকর্ষণ, কোন বিশেষ ব্র্যান্ডের জুতো পরতে ভালবাসেন, সে সব নিয়েও বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। প্রশ্নের মুখেও পড়েছেন তিনি।

মধ্য লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে ঋষির। একাধিক সুযোগসুবিধা রয়েছে সেই বাড়িতে। শোনা যায়, সেই বাড়িতে পাঁচটি বেডরুম, চারটি স্নানঘর আছে। পাশে বিশাল বাগানও। বলা বাহুল্য, ঋষির এই বিলাসবহুল বাড়ির দামও অনেক। বাড়িটি প্রায় ৪২ কোটি টাকা খরচ করে কিনেছিলেন ঋষি-অক্ষতা। এখন এই বাড়ির বাজারমূল্য ৬৫ কোটি টাকারও বেশি। গত এপ্রিল মাসে বাড়িটি নবরূপে সাজানো হয়েছে। শোনা যায়, স্ত্রী-র মনের মতো করেই ঋষি তাঁদের বাড়ি সাজিয়েছেন।

লন্ডনের ওল্ড ব্রম্পটন রোডে দক্ষিণ কেনসিংটনে আরও একটি বাড়ি রয়েছে দম্পত্তির। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এই বাড়িতে যান তাঁরা। এ ছাড়াও নর্থ ইয়র্কশায়ারে ঋষির খামারবাড়িও রয়েছে। ওই বাড়িটিও অত্যন্ত বিলাসবহুল। রয়েছে একাধিক দামি গাড়িও।

নারায়ণ মূর্তির জামাইকে ঘিরে বিতর্ক আছে আরও। যাঁরা ব্রিটেনের বাইরের বাসিন্দা কিন্তু পেশার সূত্রে সে দেশে রয়েছেন, তাঁদের সে দেশের সরকারকে একটি বিশেষ কর দিতে হয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে সেই করফাঁকির অভিযোগ উঠেছিল ঋষি-ঘরনি তথা ভারতের অন্যতম ধনী নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতার বিরুদ্ধে। যদিও সে সব অভিযোগ নস্যাৎ করে অক্ষতা জানিয়েছিলেন, তিনি সরকারি নিয়ম পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেনে চলেন। নিয়ম মেনে করও দেন।

ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের বাসিন্দা ছিলেন ঋষি। বাবা ছিলেন চিকিৎসক। মায়ের ওষুধের ব্যবসা। অক্সফোর্ড এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ঋষি ছিলেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। ‘গোল্ডম্যান স্যাক্স’-এর মতো সংস্থায় বিশ্লেষক হিসাবে কাজ করেছেন। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঢোকার আগে সেই চাকরি ছাড়েন তিনি। এখন ১০, ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা হলেন ব্রিটেনের অন্যতম ধনী ‘ঋষি’।

ঋষি আসলে সেই উজির যিনি রাজার চেয়েও ধনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.