গত দু’দিন ধরে গ্যাংটক, পেলিং এলাকা থেকে প্রচুর পর্যটক সমতলে নেমে গিয়েছেন। তবে উত্তর সিকিম তথা লাচেন, লাচুং থেকে পর্যটকদের এ দিনও ফেরানো সম্ভব হয়নি বলে সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কারণ, বৃষ্টিপাত এবং খারাপ আবহাওয়া। বায়ুসেনার কপ্টার-সহ অন্তত গোটা পাঁচেক হেলিকপ্টার মঙ্গনে রয়েছে। তবে সেগুলি এ দিনও কাজে লাগানো যায়নি। সেনাবাহিনী এবং সিকিম সরকার পুরো বিষয়টি দেখছে বলে খবর।
সিকিম সরকারের তরফে শনিবার বার্তা দেওয়া হয়েছে, পর্যটকেরা সেখানে সুরক্ষিত রয়েছেন। হোটেল, গেস্ট হাউস, সরকারি ভবনগুলিতে পর্যটকদের নিখরচায় থাকা-খাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে সরকারের তরফে। তবে গত কয়েক দিনে তাঁদের উদ্ধারের তেমন কার্যকরী ব্যবস্থা না হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। কারণ, রাস্তার যা পরিস্থিতি, তাতে ওই সব অংশে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। খারাপ আবহাওয়ার কারণে কপ্টার নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি এ দিন। সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, উত্তর সিকিমের লাচুং ও লাচেন এলাকায় দেড় হাজারের মতো পর্যটক আটক রয়েছেন এখনও। যদিও, বেসরকারি হিসাবে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থাগুলোর তরফে জানানো হয়েছে, সংখ্যাটা আড়াই হাজারের কাছাকাছি।
প্রশাসন এবং ভ্রমণ সংস্থাগুলির তরফে জানা গিয়েছে, অন্তত ১৫৭০টির মতো গাড়ি পর্যটকদের নিয়ে গত কয়েক দিনে সিকিম থেকে নেমেছে। সেই সব গাড়িতে শ্রমিক, পড়ুয়া, স্থানীয় কিছু মানুষও নেমেছেন। সব খোঁজখবর নিয়ে জানা গিয়েছে, পুরো সিকিমে আটকে থাকা পর্যটকের সংখ্যা প্রথমে যতটা মনে করা হচ্ছিল, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। সিকিমে এখনও চার হাজারের কাছাকাছি পর্যটক আটকে রয়েছেন বলে ওই সব সংস্থার দাবি।
এ দিন হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সদস্যদের একটি দল কালিম্পংয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখে এসেছে। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে তারাও। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল এ দিন বলেন, ‘‘এখনও পর্যটকদের উদ্ধার করার কাজ সে ভাবে শুরু করা যায়নি। সেটাই চিন্তার। তবে তাঁরা নিরাপদেই রয়েছেন। আত্মীয়-পরিজনেরা যাঁরাই ফোন করছেন, তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি। সিকিম সরকারের তরফে সেটাই জানানো হয়েছে।’’
শিলিগুড়ি-সিকিম ‘লাইফলাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন অংশ সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে। চুংথাংয়ে এ দিন সরকারি উদ্ধারকারী দলের কয়েক জন পৌঁছেছেন বলে খবর। তাঁদের সঙ্গে মন্ত্রী সামডুপ লেপচাও রয়েছেন। বিপর্যয়ের পর রাস্তা কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওযায় কখনও হেঁটে, কখনও দড়ির সাহায্যে চুংথাং নদী পেরিয়ে তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছন। সেখানে গাছের গুঁড়ি দিয়ে একটি সেতু তৈরি করা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে।
এ দিনও শিলিগুড়িতে কিছু পর্যটক সমতলে নেমেছেন। জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়ার সহায়তায় আজ, রবিবার থেকে বিধ্বস্ত মানুষদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে অ্যাসোসিয়েশন অব কনজ়ারভেশনের তরফে কাজ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে। উদ্যোক্তাদের তরফে রাজ বসু বলেন, ‘‘উত্তর সিকিম বাদে বাকি পর্যটকদের বেশিরভাগই নেমে গিয়েছেন। গ্যাংটকে কিছু পর্যটক অপেক্ষা করছেন। তাঁদের লোকজন উত্তর সিকিমে আটকে রয়েছেন।’’