নার্সিং সুপার-সহ ৩ শিক্ষিকাকে মুক্তি মেডিক্যাল কলেজে, এখনও আটক অধ্যক্ষ-সহ বাকিরা

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বিক্ষোভ এখনও চলছে। ঘেরাও করে রাখা হয়েছে শিক্ষক-নার্সদের। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পর নার্সিং সুপার-সহ ৩ জন শিক্ষিকাকে মুক্ত করা হয়েছে। তবে আন্দোলন ওঠেনি। সোমবার রাত থেকে হাসপাতালের প্রশাসন ব্লকে আটক ছিলেন ২৭ জন। অধ্যক্ষের ঘরের ভিতরে যে শিক্ষিকারা ছিলেন, তাঁরা মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলনরত পডুয়াদের কাছে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। অনুরোধের কিছু ক্ষণ পর নার্সিং সুপার-সহ ৩ শিক্ষিকাকে মুক্ত করেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়ের পর তাঁরা মুক্ত হলেন। যদিও প্রশাসন ব্লকের ভিতরে এখনও অধ্যক্ষ-সহ বাকি বিভাগীয় প্রধানরা আটক রয়েছেন।

বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ এক ছাত্র প্রতিনিধি সাংবাদিক বৈঠকে জানান, তাঁদের এই বিক্ষোভের ফলে হাসপাতালে পরিষেবার কোনও ব্যাঘাত ঘটছে না। হাসপাতালের সমস্ত বিভাগে কাজ অব্যাহত বলে জানিয়েছেন তিনি। আন্দোলনে এখনও অনড় রয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ছাত্র প্রতিনিধির বক্তব্য, যত ক্ষণ তাঁদের দাবি মানা হবে না, তত ক্ষণ এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা। বিক্ষোভ চলাকালীন যদি কোনও বিভাগীয় প্রধান অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁদের জন্য ৬ জনের বিশেষ মেডিক্যাল টিম তৈরি করেছেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। সকালে কারা ল্যাবেরটরি বন্ধ রেখেছিলেন, সে বিষয়ে ছাত্রদের কোনও ধারণা নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।

প্রসঙ্গত, ছাত্র সংসদ ভোটের দাবিতে সোমবার রাত থেকেই ঘেরাও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। কলেজের অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধানদের আটক করে রেখেছিলেন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। মঙ্গলবার সকালে পাল্টা বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন হাসপাতালের নার্সরাও। নার্সিং সুপারকে ছাড়ার দাবিতে অধ্যক্ষের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসপাতালের কর্মরত নার্সরা।

এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে ইট দিয়ে তালা ভেঙে প্রশাসনিক ব্লকের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন রোগীর আত্মীয়রা। তাঁদের দাবি, ওয়ার্ডে রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছচ্ছে না, সকাল থেকে হাসপাতালের প্যাথলজি, এক্সরে এবং বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ বন্ধ। স্থগিত কিছু অস্ত্রোপচারও বলে দাবি রোগীর পরিজনদের। এই ঘটনায় পুলিশের তরফ থেকেও কোনও সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে হাই কোর্টে মামলা করেছেন এক রোগীর আত্মীয়। রোগীর পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আইনজীবী সুমন সেনগুপ্ত। ঘেরাও অবিলম্বে তুলে রোগীর পরিজনদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক, এই আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি। মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। বুধবার এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৬ সালের পর মেডিক্যাল কলেজে আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। বহু দিন ধরেই ভোট নির্বাচনের দাবি নিয়ে বিক্ষোভ চলছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। কলেজের তরফে জানানো হয়েছিল, ২২ ডিসেম্বরে ভোট নির্বাচন সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। কোনও কারণে তা পিছিয়ে যায়। পরে এই প্রসঙ্গে আর কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় আবার সোমবার দুপুর থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.