আরজি কর আন্দোলনে সাড়ে ৩ কোটি অনুদান! কিসে কত খরচ, কত টাকা এখনও বেঁচে? হিসাব দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা

আরজি করে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর জুনিয়র ডাক্তারেরা রাজ্য জুড়ে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তাতে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছেন তাঁরা। তার মধ্যে এক কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এখনও দু’কোটির বেশি টাকা বেঁচে রয়েছে। বুধবার জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনগুলি সম্মিলিত ভাবে আরজি কর হাসপাতালে গণকনভেনশনের আয়োজন করেছিল। সেখানেই অনুদান এবং খরচের হিসাব দিয়েছেন তাঁরা।

জুনিয়র ডাক্তারদের মোট তিনটি সংগঠনের হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্ট (ডব্লিউবিজেডিএফ) ছাড়াও রয়েছে আরজি কর রেসিডেন্ট ডক্টর্‌স অ্যাসোসিয়েশন (আরজিকরআরডিএ) এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ রেসিডেন্ট ডক্টর্‌স অ্যাসোসিয়েশন (এমসিকেআরডিএ)। এর মধ্যে কোনও কোনও সংগঠন আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই আন্দোলন শুরু করেছিল। তাঁরা অনুদানও পেয়েছেন সেই সময় থেকে। আবার কোনও সংগঠন অনুদান নেওয়া শুরু করে আরও কিছু দিন পরে। কলকাতার বুকে টানা ১৭ দিন অনশন করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধর্না, আরজি করে গণকনভেনশন, নির্যাতিতার মূর্তি বসানোর মতো একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। চলেছে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টে দীর্ঘ আইনি লড়াই। কোন খাতে অনুদানের কত টাকা খরচ হয়েছে, এখনও কত টাকা বাকি আছে, বুধবার তার বিস্তারিত হিসাব দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা কী, তা-ও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

ডব্লিউবিজেডিএফ ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অনুদানের হিসাব দিয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, এই সংগঠন মোট দু’কোটি ২৬ লক্ষ ১৯ হাজার ১৩ টাকা অনুদান পেয়েছে। মার্চ মাস পর্যন্ত তারা খরচ করেছে ৩১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩৩৪ টাকা। এখনও বেঁচে আছে এক কোটি ৯৪ লক্ষ ৪২ হাজার ৬০৪ টাকা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ৪,৫৯,৯২১ টাকা খরচ হয়েছে অনশনমঞ্চ তৈরি এবং অনশন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এ ছাড়া, সভা-সমাবেশে ডব্লিউবিজেডিএফ আরও আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করেছে। তাদের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ তৈরির জন্য খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার টাকা। অভয়া ক্লিনিক আয়োজনে এক লক্ষ ৯২ হাজার টাকা, আদালতে আইনি লড়াই চালানোর জন্য ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

আরজিকরআরডিএ মূল ঘটনার পরের দিন থেকেই অনুদান সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিল। ১০ অগস্ট থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে মোট অনুদান পেয়েছে ৫৬ লক্ষ ৮৮ হাজার ৪১২ টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছে ৪৮ লক্ষ ৬১ হাজার ৯১২ টাকা। এখনও বাকি আছে ১৭ লক্ষ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, আরজি করে ধর্না মঞ্চ তৈরি এবং অবস্থান চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছ’লক্ষ ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্বাস্থ্যভবন আন্দোলনে খরচ হয়েছে পাঁচ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। আন্দোলন চলাকালীন খাবার এবং জলের জন্য দু’লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খরচ করেছে আরজিকরআরডিএ। হাসপাতাল চত্বরে নির্যাতিতার মূর্তি বসাতে খরচ হয়েছে ৫১ হাজার ৩০০ টাকা। এ ছাড়া, অবস্থান ও আন্দোলনে যাতায়াত এবং থাকার জন্য এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, সাউন্ড বক্স এবং মাইকের জন্য এক লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা এবং আইনি লড়াইয়ের জন্য ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এমসিকেআরডিএ ১২ অগস্ট থেকে অনুদান সংগ্রহ করেছিল। ৩১ মার্চ পর্যন্ত তারা অনুদান বাবদ পেয়েছে ৭৫ লক্ষ ১৩ হাজার ৭১০ টাকা। মোট খরচ হয়েছে ৫৭ লক্ষ ৫ হাজার ৭৪৮ টাকা। এখনও তাদের তহবিলে ১৮ লক্ষ ৭ হাজার ৯৬২ টাকা বাকি আছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, অভয়া ক্লিনিকের জন্য এক লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা, লালবাজার অভিযানের জন্য ৬৬ হাজার ৬১৬ টাকা, মিছিলের জন্য এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, স্বাস্থ্যভবন অভিযানে ১২ লক্ষ ৭ হাজার টাকা, মহালয়ার মিছিলে সাত লক্ষ ১৬ হাজার টাকা এবং আইনি লড়াইয়ে দু’লক্ষ ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

তিন সংগঠনের মোট অনুদানের মধ্যে এখনও দু’কোটি ২৯ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬৬ টাকা বেঁচে আছে। কী করবেন এই টাকা দিয়ে? আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘এখনও মামলা চলছে। তা ছাড়া, আমরা অভয়া ক্লিনিক করার কথা ভেবেছি। এই টাকা নিয়ে কী করা যায়, আমাদের ওয়েবসাইটে সেই সংক্রান্ত পরামর্শ চাইব।’’ দেবাশিস জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদে যে সমস্ত এলাকায় অশান্তি হয়েছে, সেখানে তাদের প্রতিনিধি দল যাবে।

বুধবার জুনিয়র ডাক্তারদের কনভেনশনে উপস্থিত ছিল নির্যাতিতার পরিবার। তারা কন্যার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। সিবিআইয়ের তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে আরও এক বার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। চাকরিহারা শিক্ষকদের মিছিলেও তাঁরা যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা এবং মা। তাঁদের বক্তব্য, বিচারের দাবিতে যে কোনও আন্দোলনকে তাঁরা সমর্থন করবেন। এ ছাড়া প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকার, মীরাতুন নাহার, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বেরা কনভেনশনে ছিলেন। জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, সাড়ে ছ’হাজার মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে তাঁদের অর্থসাহায্য করেছেন। এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালীন ২৫০টি সংস্থা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.