100 days Job: একশো দিনের কাজে অনিয়মের অভিযোগ! চার জেলা প্রশাসনকে জরিমানা কেন্দ্রীয় দলের

কিছু ক্ষেত্রে কাজের গুণমান খুব খারাপ। কিছু ক্ষেত্রে কাজের পরেও তৈরি হয়নি রাস্তা কিংবা পুকুরের মতো স্থায়ী সম্পদ। সূত্রের দাবি, আবার কয়েকটি জায়গায় যে কাজ হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল, আদপে খোঁজই মেলেনি সেগুলির। রাজ্যের পেশ করা একশো দিনের কাজের খতিয়ান মিলিয়ে দেখতে এসে এমন বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি জেলা প্রশাসনকে মোটা টাকা জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় দল। বিরোধী শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, দুর্নীতি না থাকলে, এই জরিমানা রাজ্য মেনে নিল কেন? উল্টো দিকে, এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পক্ষপাতের গন্ধ পাচ্ছে নবান্ন।

রাজ্যের পেশ করা খতিয়ান না মেলার অভিযোগে হুগলিতে প্রায় ২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় দল। পূর্ব বর্ধমানে এই অঙ্ক ১ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। মালদহ ও দার্জিলিঙে যথাক্রমে প্রায় ২৬ ও ১৭ লক্ষ টাকা। একশো দিনের কাজের টাকা নিয়ে চাপান-উতোরে এমনিতেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। রাজ্যের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে আর্থিক অবরোধ করতেই এই প্রকল্পে মজুরির টাকা বন্ধ করেছে কেন্দ্র। মোদী সরকারের পাল্টা দাবি, ঠিকমতো কাজ না হওয়া এবং ঠিকঠাক হিসাব দাখিল না করার কারণেই ওই পদক্ষেপ। এই প্রেক্ষাপটে জল্পনা, তবে কি কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে যাওয়ার নেপথ্যে এই জরিমানা অন্যতম কারণ? এই জল্পনা আরও দানা বেঁধেছে বরাদ্দ বন্ধ করার আগে জরিমানা চাপানোয়।

রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায়ের বক্তব্য, “কোভিডে দীর্ঘ সময় কাজের ক্ষতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বরাবর এই প্রকল্পে বাড়তি গুরুত্ব দেন। কর্মদিবসের নিরিখে গত কয়েক বছর ধরে দেশে যে রাজ্য প্রথম স্থানে, তা জানে কেন্দ্রও। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে রাজ্যের প্রশংসা করে গিয়েছেন। কোভিডের ক্ষতি পূরণে কিছুটা সময় দরকার। এই সময়ে টাকা বন্ধ করা ঠিক নয়।”

রাজ্য প্রশাসনিক কর্তাদেরও দাবি, কাজ হয়েছে ঠিক মতো। প্রতিটি কাজের নথি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। এক অফিসারের কথায়, “হয়তো কোথাও যত বড় পুকুর কাটার কথা ছিল, তার তুলনায় তা ছোট কাটা হয়েছে বলে মনে হয়েছে কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিদের। কিন্তু কেন্দ্রীয় দল কতটা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ খতিয়ে দেখেছে, তা চর্চার বিষয়।”

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর অভিযোগ, “একশো দিনের কাজের ‘মাস্টার রোলকে’ প্রভাবিত করা হয়েছে। অভিযোগ অঢেল। সরকারি অফিসারেরা কার্যত দিশাহারা। স্থায়ী সম্পদ তৈরি হয়নি। মূলধনী খাতে রাজ্য বরাদ্দ কমিয়েছে। সব জেলায় এই পরিস্থিতি। কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।”

কিন্তু পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রের নিয়ম মেনে অডিট, জিয়ো-ট্যাগিং, নজরদারি, মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার, দল গড়ে কাজের নজরদারি—সব হয়। দুর্নীতি বা অনিয়মের যোগ এখানে নেই।”

১০০ দিনের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে ২০১৯ সাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আসা-যাওয়া করছে কেন্দ্রীয় দল। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, বিগত কয়েক বছরের কাজের নিরিখেই কয়েকটি জেলাকে জরিমানা করা হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “গত অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এগুলি হতে শুরু করে। তাদের যা পর্যবেক্ষণ বা নির্দেশ ছিল, সবই কার্যকর করা হয়েছে। জরিমানা ছাড়া বিগত কয়েক বছরের কাজের খতিয়ান মিলিয়ে কোনও-কোনও ক্ষেত্রে টাকা উদ্ধারও করা হয়েছে।”

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মানছেন, প্রকল্পের কাজে কেন্দ্রীয় দলের ‘খুঁত’ খুঁজে পাওয়া, প্রকল্প নিয়ে বিরোধীদের দুর্নীতির অভিযোগ এবং জেলাগুলিকে জরিমানা করার সঙ্গে প্রকল্পের টাকা আটকে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক হয়তো রয়েছে। রাজ্য বিজেপি একাধিক বার এই প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে। আবার তেমনই অনেকের প্রশ্ন, আগামী বছরে নির্ধারিত পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশেই বরাদ্দ বন্ধ করা হচ্ছে না তো?

তার উপরে রাজ্য অভিযোগ খণ্ডনে হাতিয়ার করছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কপিল মোরেশ্বর পালিতের মন্তব্যকে। দিন কয়েক আগে কলকাতায় এসে তিনি বলেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি।” এর পাল্টা হিসেবে বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কয়েক দিনআগেই বাংলায় এসে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরির মন্তব্য ছিল, ‘‘রাজ্যের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ তারা ‘অডিট রিপোর্টই’ দিচ্ছে না।” রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রীচন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া ছিল, “এ ধরনের প্রকল্পে যা নথি ও তথ্যপ্রমাণ দরকার, সব কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.