শেষ ইচ্ছের দাম! কোভিড কেড়েছে জীবন, আড়াই লাখে স্ত্রীর ‘জীবন্ত’ মূর্তি বসালেন স্বামী

কোভিড কেড়ে নিয়েছে স্ত্রীকে। কিন্তু ভালোবাসা? তাকে কাড়ে কার সাধ্য! স্ত্রীকে হারিয়েছেন কোভিডে, কিন্তু স্ত্রীকে দেওয়া কথা, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা তা যে রয়ে গিয়েছে একইরকম… আর তাই স্ত্রীকে দেওয়া কথা রাখতেই আড়াই লাখ টাকা দিয়ে ঘরে প্রিয়তমার মূর্তি বসালেন স্বামী। মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটি কলকাতার কৈখালির। ২০২১-এ কোভিডে প্রাণ হারান স্ত্রী ইন্দ্রাণী। তারপরই স্ত্রীর স্মৃতিতে স্বামী তাপস শান্ডিল্য আড়াই লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীর মূর্তি গড়ে ঘরে বসান। সিলিকন স্ট্যাচুটিকে দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, সেটি আসলে একটি মূর্তি। ঠিক যেরকমভাবে ইন্দ্রাণীদেবী ঘরে তাঁর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা সোফায় বসে থাকতেন, অবিকল ঠিক সেইভাবেই সোফায় বসানো মূর্তিটি।  

৬৫ বছরের তাপসবাবু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে গড়া স্ত্রী ইন্দ্রাণী দেবীর সিলিকন মূর্তিটি ওজনে প্রায় ৩০ কিলোগ্রাম। আর ঘরের মধ্যে সেটি বসানো সোফার মধ্যে। যে সোফা ছিল জীবিতকালে ইন্দ্রাণীদেবীর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর স্মৃতিতেই মূর্তি গড়ে ঘরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন ভিআইপি রোডের বাসিন্দা তাপসবাবু। যদিও তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা এসেছে তাঁর পরিবার থেকে। পাড়া-পড়শিরাও অনেকে সমালোচনা করেন তাঁর এই মূর্তি গড়ার সিদ্ধান্তের। কেউ কটাক্ষ করেন, এটা তাপসবাবুর বিকৃত মানসিকতা। অবসেশন! কেউ আবার বলেন, নজরে আসার চেষ্টা ছাড়া এটা আর কিছুই নয়। যদিও তাপসবাবুর সাফ কথা, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান জানাতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত।

তাপসবাবুর কথায়, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রাণ হারান তাঁর স্ত্রী। তখন তাঁর মনে পড়ে, একবার তাঁরা যখন ইসকন মন্দিরে ঘুরতে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে একেবারে জীবন্ত দেখতে সেইসব বিভিন্ন মূর্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী। তখনই তাপসবাবুর কাছে  ইন্দ্রাণীদেবী তাঁর মনের একটি বাসনার কথা জানান। তাপসবাবুকে বলেছিলেন, যদি তাঁর আগেই ইন্দ্রাণীদেবীর মৃত্যু হয়, তবে তাপসবাবু যেন তাঁর একটি এরকম মূর্তি গড়েন। আর স্ত্রীর সেই ইচ্ছাপূরণেই তিনি আড়াই লাঘ টাকা ব্যয়ে মূর্তি গড়ে ঘরে সোফায় বসিয়েছেন বলে জানান তাপসবাবু।

তাপসবাবুর কথা থেকেই জানা যায়, ইন্দ্রাণীদেবীর মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছাকে বাস্তব রূপ দিতে দরকার হয়ে পড়ে একজন ভাস্করের। শুরু হয় খোঁজ। এমন একজন ভাস্কর, যিনি তাপসবাবুর ইচ্ছেকে বুঝতে পারবেন। সেই ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেবেন। ভাস্করের সেই খোঁজ শেষ হয় ২০২২ সালে সুবিমল দাসের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর। তারপরই সুবিমল দাস ও তাপসবাবু দুজনে মিলে শুরু করেন ‘জীবন্ত’ মূর্তি গড়ার কাজ। আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি ৩০ কেজির মূর্তি সোনার গয়নায় সুসজ্জিত। কারণ ইন্দ্রাণীদেবী সোনার গয়না-ই বেশি পছন্দ করতেন। সেইসঙ্গে মূর্তিকে পরিয়েছেন আসাম সিল্কও। যে শাড়িটি ইন্দ্রাণীদেবী তাঁর ছেলের বিয়েতে পরেছিলেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.